প্রীতিলতা হলের ছাত্রীরা প্রীতিলতাকে কতটুকু জানেন?

.
.
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী। প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা। তাঁর দলবল নিয়ে ক্লাবটি আক্রমণ করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে সফলভাবে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ সময় পুলিশের আটক এড়াতে বীরকন্যা প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন। তাঁর নামেই নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা আবাসিক হলের। সেই হলের ছাত্রীরা প্রীতিলতা সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

‘প্রীতিলতা নারী বিপ্লবী ছিলেন’। এই এক লাইনেই শেষ হয়ে যায় তিন ছাত্রীর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে জানার গণ্ডি, তাঁর সম্পর্কে আর কোনো তথ্যই জানেন না। তাঁরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন প্রীতিলতা আবাসিক হলে।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী এবং শহীদ। প্রীতিলতার মৃত্যুবার্ষিকী ২৩ সেপ্টেম্বর সামনে রেখে ১৪ সেপ্টেম্বর হাজির হয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা আবাসিক হলে। এই আবাসিক হলের ছাত্রীরা প্রীতিলতা সম্পর্কে কতটুকু জানেন, তাঁর বিপ্লবী জীবন ছাত্রীদের মন ছুঁয়ে যায় কি না, ছাত্রীরা তাঁর থেকে অনুপ্রেরণা পান কতটুকু ইত্যাদি জানতে চেয়েছিলাম।
‘তেমন কিছু জানি না। হালকা একটু জানি। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।’ কথাগুলো বলেন আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আফরিন আক্তার। পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্রী কনিকা শাওন একই কথা বলেন। প্রীতিলতা হলে থেকেও তাঁর সম্পর্কে না জানার কারণ হিসেবে বললেন, ‘সবার সব বিষয়ে আগ্রহ থাকে না।’ উদ্ভিদবিজ্ঞানের নন্দিনী সিনহা কেবল হলের সামনে থাকা প্রীতিলতার ম্যুরালের লেখা পড়েছেন।
‘খুব অল্প বয়সে মারা যান তিনি, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানি না।’ প্রীতিলতাকে নিয়ে এ কথাগুলো বলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সোহানা সুলতানা। তাঁর সম্পর্কে কীভাবে জেনেছেন? সোহানা বলেন, ‘লোকমুখে শুনে। তাঁকে নিয়ে কোনো লেখা বা জীবনী পড়িনি।’ একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রী সাবরিনা রহমান বলেন, ‘আমি তাঁর জীবনী পড়েছিলাম, তবে এখন সব তথ্য মনে নেই।’ ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী ফারহানা কিশোয়ারা বলেন, ‘প্রথম বর্ষে পড়ার সময় পত্রিকায় পড়েছিলাম, এখন মনে নেই।’ এঁরা সবাই প্রীতিলতা আবাসিক হলের ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলে ঘুরে ঘুরে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রীতিলতা এক কিংবদন্তির নাম হলেও হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া প্রীতিলতার সাহসী-সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে ছাত্রীরা তেমন কিছু জানেন না। সশস্ত্র সংগ্রামে প্রথম আত্মোৎসর্গকারী নারী হিসেবে প্রীতিলতাকে শ্রদ্ধা জানাতেই হলের এ নামকরণ বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরুর আগেই ছাত্রীদের ঠাঁই নিতে হয় আবাসিক হলে। অনেকে দুই থেকে পাঁচ বছর হলে থাকলেও কেন এই হলের নাম প্রীতিলতা হলো, তিনি কে অথবা কী তাঁর অবদান—সে সম্পর্কে খুব একটা জানার আগ্রহ দেখা গেল না।
এ বিষয়ে হলের অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রীতিলতার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে হলে আগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এখন কেবল ম্যুরালে ফুল দেওয়ার মাধ্যমেই তাঁকে স্মরণ করা হয়, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এসব অনুষ্ঠানে হলের ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন না। তথ্যপ্রযুক্তির কারণে তাঁরা খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছেন।’
নাট্যতত্ত্বের শিক্ষার্থী ফারজানা হক। তিনি প্রীতিলতা হলের সব অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রীতিলতা সম্পর্কে বেশ ধারণা আছে ফারজানার। প্রীতিলতাকে নিয়ে বর্তমানে অনুষ্ঠান না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বছর এত জাতীয় অনুষ্ঠান করা হয় যে প্রীতিলতাকে নিয়ে আলাদা অনুষ্ঠান করা হয় না। তা ছাড়া হলে এখানে বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীরা থাকেন। একেক বিভাগের পরীক্ষা একেক সময়ে হওয়ার কারণেও খুব বেশি অনুষ্ঠান করা যায় না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘মেয়েরা যে প্রীতিলতাকে জানে না, সে বিষয়ে ধারণা ছিল না, বিষয়টি দুঃখজনক।’ প্রীতিলতা সম্পর্কে মেয়েদের জানাতে হলে তাঁকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন বা লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।