জলে রুপার জয়

মা ও বাবার সঙ্গে রুপা l ছবি: প্রথম আলো
মা ও বাবার সঙ্গে রুপা l ছবি: প্রথম আলো

মায়ের আদর কেমন, তা জানা ছিল না রুপা খাতুনের। দুই বছর বয়সে রুপাকে রেখে মারা যান মা খাদেজা খাতুন। স্ত্রীকে হারিয়ে বাবা রবিউল ইসলামও তখন দিশেহারা। পরে রুপার নতুন মা হিসেবে দায়িত্ব নেন আমেনা খাতুন। রুপার পৃথিবীটাই যিনি বদলে দিয়েছেন। ঢাকার মিরপুরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বয়সভিত্তিক সাঁতারে (১০ বছর) ছয়টি ইভেন্টের সব কটিতেই সোনা জিতেছে বিকেএসপির ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রুপা খাতুন। এর মধ্যে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছে পাঁচটিতে (২০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে, ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক ও বাটারফ্লাই এবং ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে)। মেয়েদের বিভাগে সেরা সাঁতারুও হয়েছে
এই কিশোরী।
বিজয়মঞ্চে রুপা যখন সোনার পদক গলায় তুলছিল, অঝোরে কাঁদছিলেন আমেনা। এ কান্না সুখের কান্না। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার কান্না। অনেক কষ্ট পাড়ি দিয়ে আসা আনন্দ বুঝি এমনই হয়!
রুপার সাঁতারু হওয়ার গল্পটা যেন রূপকথাকেও হার মানায়। কুষ্টিয়া শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে মিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম আমলাতে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সাঁতারু উঠে এসেছেন এই আমলা গ্রাম থেকে। রুপার বাবা রবিউল ইসলাম আমলার একটি রেেস্তারাঁর কর্মচারী। নুন আনতে পানতা ফুরোনোর অবস্থা তাঁর। ফ্রি-স্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক, বাটারফ্লাই—শব্দগুলো তিন বছর আগেও তাঁর জীবনে ছিল না। তাঁকে সাঁতারের ইভেন্টগুলো চিনিয়েছেন আমেনা। শুধু তা-ই নয়, রুপাকে বিকেএসপির পথটাও চিনিয়েছেন আমেনাই।
আপন মাকে যেন ভুলেই গেছে রুপা, ‘আমার আম্মু মারা গেছে। কিন্তু এই আম্মুকে পেয়ে সেটা বুঝতে পারি না। পানিতে নামতে ভয় পেতাম আমি। কিন্তু আম্মুই আমাকে সাঁতার শিখিয়েছেন।’
বিকেএসপির কোচ মোহাম্মদ সুলায়মানও রুপার ভেতরে দেখছেন অপার সম্ভাবনা, ‘সাঁতারু হওয়ার সব গুণ তার মধ্যে আছে। আশা করি এখানে বাকি ইভেন্টেও রেকর্ড গড়বে এবার। নিশ্চয় রুপা একদিন বড় সাঁতারু হবে।’
বাবা রবিউলের চোখ এখন দূরের স্বপ্নের বাতিঘরে—এই মেয়ে একদিন বিশ্বজয় করবে, এটাই তাঁর চাওয়া।
মায়ের অভাবটা কখনোই বুঝতে দেননি আেমনা—এমনটাই বলে রুপা। ‘আমার সাঁতারু হওয়ার জন্য তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আমি যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারছিলাম না, তখন ছাগল বিক্রি করে আমার ভর্তির টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন আম্মু।’ বিকেএসপিতে প্রতিদিন দুই বেলা রুপা অনুশীলন করে কোচ মোহাম্মদ সুলায়মানের কাছে। ‘আমি মাইকেল ফেল্প্সের সাঁতারের ভিডিও দেখি। স্যারেরা ল্যাপটপে আমাকে দেখান এই ভিডিও। আমি অনেক বড় সাঁতারু হতে চাই।’
বাবার স্বপ্ন সত্যি করতে চায় রুপা। একদিন এসএ গেমসে সোনার পদক জিতবে, বাবা খুশি হবেন। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে রুপা।