সফল হওয়ার পূর্বশর্ত 'পাগল' হওয়া

১৬ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ভারতীয় অভিনেতা শাহরুখ খান। সেখানেই শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য রেখেছেন তিনি
শাহরুখ খান, ছবি: এএফপি
শাহরুখ খান, ছবি: এএফপি

ডক্টরেট ডিগ্রি আমার জন্য নিশ্চয়ই একটা সম্মানজনক ব্যাপার। আমি যে পেশায় আছি, সেখানে ‘সবিনয়ে’ শব্দটা প্রায়ই ব্যবহার হয়। এ ধরনের ‘কপট তোয়াজ’ আমার ঠিক পছন্দ না, তাই এই শব্দটা আমি ব্যবহার করছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এ রকম অনুষ্ঠানগুলোই আমাকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে আমি কিছু নির্দেশনাও পেয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে ‘সাফল্য’ সম্পর্কে ‘পরামর্শ’ দিতে!
জীবন সম্পর্কে আমি যা কিছু শিখেছি, তার বেশির ভাগই চলচ্চিত্র থেকে পাওয়া।
আমার ক্যারিয়ারের প্রথম দিককার একটি চলচ্চিত্রের নাম দিওয়ানা (হিন্দিতে দিওয়ানা শব্দটা প্রেম-সংক্রান্ত কিংবা ভালো কিছুর নেশায় ‘পাগলামি’ অর্থে ব্যবহার করা হয়।) এই চলচ্চিত্র থেকে আমি যা শিখেছি, জীবনে সুখী ও সফল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ‘পাগল’ হওয়া। ভেব না জীবনের ছোট ছোট খ্যাপাটে ভাবনাগুলো তোমার জন্য এতটাই ক্ষতিকর যে সারা জীবন এসব চিন্তাকে চেপে রাখতে হবে। পাগলামিগুলোকে স্বীকার করে নাও, আর সেটাকেই নিজের জীবন গড়তে কাজে লাগাও। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষ, যাঁরা বিপ্লব করেছেন, যাঁরা উদ্ভাবন করেছেন, আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা পেরেছেন কারণ তাঁরা নিজের মানসিক গঠনকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। ‘স্বাভাবিক’ বলে কিছু নেই। এটা কেবল ‘প্রাণহীন’ এর প্রতিশব্দ!
দিওয়ানার পরপরই আমি চমৎকার নামে একটা ছবিতে অভিনয় করেছি, যেখানে আমার চরিত্রটা একজন দুর্ভাগা নায়কের। হিন্দিতে ‘চমৎকার’ শব্দের অর্থ সহজ কথায় ‘মিরাকল’ বা কোনো অলৌকিক ঘটনা। এই ছবি থেকে আমার শিক্ষা অনেকটা এমন: ধোঁকায় পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হঠাৎ একদিন যদি আবিষ্কার কর, তুমি একটা গর্তের ভেতর ঘুমিয়ে আছ, ভয় পেয়ো না। নিশ্চয়ই অদূরেই কোনো ‘মিরাকল’ অপেক্ষা করছে। সেই ‘মিরাকল’ কোনো ভূতও হতে পারে! তোমার কাজ হলো চুপচাপ শুয়ে থাকা। একটু অন্যভাবে বললে, ‘বেঁচে থাকা’ই হলো সেই অলৌকিক ঘটনা যার জন্য তুমি অপেক্ষা করছ। তোমার যা কিছু আছে, সব কাজে লাগাও। মনের জোর, আশপাশের মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা, সুস্বাস্থ্য, সৌভাগ্য...যত উপহার জীবন তোমাকে দিয়েছে তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার কর। জীবনকে শ্রদ্ধা কর। জীবনের প্রতিটা উপহার, প্রতিটা মুহূর্তকে নষ্ট হতে না দিয়ে কাজে লাগাও। সাফল্যের কোনো মাপকাঠি নেই কিন্তু জীবন তোমাকে যা কিছু দিয়েছে তার পুরোটা কাজে লাগানোর সুযোগ তোমার আছে।
তুমি জানো না, ভবিষ্যতে তোমার জন্য কী অপেক্ষা করছে। জানো না ‘আগামীকাল’ বলে কিছু আছে না নেই। কাল হো না হো নামের একটা ছবিতে আমি একেবারে তরুণ বয়সে মারা যাই। এই ছবির মূল কথাও সেটাই। আমি কখনোই আমার দুই বড় সন্তানকে এই ছবিটা শেষ পর্যন্ত দেখতে দিইনি। এমনকি আমরা ছবির অন্য রকম একটা সমাপ্তি তৈরি করেছিলাম শুধু ওদের জন্য। কিন্তু এখন ওরা তোমাদের মতো বড় হয়েছে। শিগগিরই নিজের জীবনে নিজের মতো করে একটা চমৎকার যাত্রা শুরু করবে। আমি ওদের এই রোমাঞ্চ থেকে আগলে রাখতে চাই না। বরং আমার অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যতটা সম্ভব ওদের বলতে চাই, এই সময়টাতেই যা পার করে নাও।

মুহূর্তে বাঁচ। আজকে বাঁচ। চঞ্চল চোখে তুমি হয়তো দেখতে পাচ্ছ না। কিন্তু এটাই কাজে লাগানোর শ্রেষ্ঠ সময়। আমি তোমাদের সবাইকে শুধু এটুকুই বোঝাতে চাই, এই সময়টা তোমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পড়ালেখা কর। কষ্ট কর। নিয়ম দিয়ে নিজেকে বেঁধে রেখ না। কখনো কাউকে দুঃখ দিয়ো না...আর কখনোই অন্যের স্বপ্নে বেঁচ না। যতবারই ভুল কর না কেন, হেরে যাও না কেন, যতই মনে হোক না কেন সারা দুনিয়া তোমার বিপক্ষে, একটা কথা মনে রেখ—বব মার্লের ভাষায় যদি বলি, ‘...অ্যাট দ্য অ্যান্ড এভরিথিংস গনা বি অলরাইট’ (দিন শেষে সব ঠিক হয়ে যাবে)। আর আমার ভাষায় যদি বলি, জীবনটা হিন্দি সিনেমার মতো। শেষে গিয়ে সব ঠিক হয়ে যায়। আর যদি ঠিক না-ও হয়, তাহলে বুঝতে হবে ‘শেষ’ এখনো আসেনি। কারণ ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরি দোস্ত!’ (কাহিনি এখনো শেষ হয়ে যায়নি বন্ধু) এটাকেই জীবনের একমাত্র সত্যি হিসেবে মেনে নাও।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফ ইসলাম