সু চির 'ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার' পড়ে অভিভূত হয়েছি

রাশেদা কে চৌধুরী
রাশেদা কে চৌধুরী

শৈশব থেকেই বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। প্রথম পড়া গল্পের বই ঠাকুরমার ঝুলি। তারপর পড়েছি ঈশপের গল্প। এ ছাড়া নিয়মিত পড়তাম সন্দেশ পত্রিকা। অপেক্ষা করতাম, কখন হাতে পাব পত্রিকাটি। এরপর যখন আরেকটু বড় হলাম, পাঠাগারে যেতে শুরু করলাম। আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে সিলেটে। মুসলিম সাহিত্য সংসদের একটা পাঠাগার ছিল সেখানে। ছোট ভাইকে সঙ্গী করে সেই পাঠাগারে নিয়মিত বই পড়তে যেতাম। তখন নানা বিষয়ের বই পড়েছি। আর আমাদের স্কুলেও একটা পাঠাগার ছিল। সেটার বইও পড়তাম। স্কুল ছুটির পর আমার অবসরের সঙ্গী ছিল পাঠাগার।

সু চির ‘ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার’
সু চির ‘ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার’

বই পড়ার বিষয় এলেই আমার মায়ের কথা আসবেই। তিনি ছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের ছাত্রী। আমাদের পরিবারটা রক্ষণশীল ছিল। তবুও নানা বাধা পেরিয়ে আমার বাবা, মাকে ডাক্তারি পড়িয়েছিলেন। মা প্রচুর বই পড়তেন। আমার বইয়ের প্রতি যে ঝোঁক, তা পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে।

কৈশোরে রহস্যরোমাঞ্চের প্রতি আমার আকর্ষণ তৈরি হয়। তখন অগাথা ক্রিষ্টি, নিহার রঞ্জন গুপ্তর বই খুব পছন্দ করতাম। দস্যু বনহুর সিরিজের বই খুব পড়তাম।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই পড়তে শুরু করেছি আরও পরে। বৃত্তি পরীক্ষার টাকা পেয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত কিনেছিলাম। সে সময় লুকিয়ে লুকিয়ে অসংখ্য বই পড়েছি। একটা ঘটনা বলতে পারি। তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। ইতিহাস পরীক্ষার আগের রাতে মশারির ভেতর ঢুকে বেতাল পঞ্চবিংশতি বইটা পড়েছিলাম। একদিকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া, অন্যদিকে বইটার ভেতরের গল্প—দুটো মিলে অদ্ভুত একটা উত্তেজনা বোধ করেছিলাম।


বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পড়তে শুরু করি রোমান্টিক উপন্যাস। তখন প্রমথনাথ বিশীর বই খুব ভালো লাগত। আর ভালো লেগেছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অপুর সংসার।

ইদানীং নানা ব্যস্ততায় সময় হয়ে ওঠে না। তবু বই পড়ি। বইমেলা এলেই নিজে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বই কিনি। ভালো লাগে। নতুন প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে তাহমিমা আনামের উপন্যাস খুব ভালো লাগে। আরেকটা বই পড়ে অভিভূত হয়েছি। সেটি হচ্ছে অং সান সু চির ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেটে আমাদের পৈতৃক বাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ খুব কাছ থেকে দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের প্রতি একধরনের ভালো লাগা আছে। এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প অসাধারণ লেগেছে।

অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার