তামিম যখন বাবা

>
বাবা তামিম ইকবাল ও মা আয়েশা সিদ্দিকার কোলে পুত্র মোহাম্মদ আরহাম ইকবাল। ছবি: তামিম ইকবালের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বাবা তামিম ইকবাল ও মা আয়েশা সিদ্দিকার কোলে পুত্র মোহাম্মদ আরহাম ইকবাল। ছবি: তামিম ইকবালের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
তাঁর হাতের ব্যাট নাকি তলোয়ারের মতো। সব রকমের ক্রিকেটেই এখন বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। সেই তামিম ইকবাল বাবা হিসেবে কেমন? শিশুপুত্র মোহাম্মদ আরহাম ইকবালকে নিয়ে কেমন সময় কাটছে তামিম ও তাঁর স্ত্রী আয়েশার?

বয়স কত হবে? টেনেটুনে দুই মাস। এর মধ্যেই কত কিছু দেখে ফেলল ছেলেটা! ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে জন্ম। সেখান থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামের পিতৃভূমিতে। এরপর তো সোজা মক্কায়! এই বয়সেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ওমরাহ হজ করে ফেলেছে আরহাম।

.
.

পুরো নাম মোহাম্মদ আরহাম ইকবাল। এর আগেও নামটা দু-একবার পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়ায় এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা কে এই আলোচিত শিশু। ক্রিকেটার তামিম ইকবালের প্রথম সন্তান। যার জন্মের পরপর মজা করেই তামিমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘ছেলে বাঁহাতি না ডান হাতি?’ আরহামের বাবার সপ্রতীভ উত্তর ছিল, ‘এখনো বোঝা যাচ্ছে না...আর কয়টা দিন যাক।’
আরহাম বাবার মতোই বাঁহাতি হবে কি না তা জানতে আরেকটু অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
তবে অন্য অনেক কিছুতেই যে সে বাবার মতো নয়, তা এর মধ্যেই দৃশ্যমান। তামিম যেমন ঠান্ডা খুব পছন্দ করেন। যত ঠান্ডার দেশেই যান, রুমে এসি চলবে। সেই তাঁকেই এখন রাত কাটাতে হয় এসি ছাড়া! ঘরে এসি চালালেও সেটা না চালানোর মতোই। সন্তানের জন্মের পর এই পরিবর্তনটাই নাকি সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তামিমের জীবনে, ‘আমার বাবা, চাচা, ভাই, আমি...আমরা কেউ গরম সহ্য করতে পারি না। আমাদের জন্য এসি মাস্ট। অথচ ও কি না এসির মধ্যে ঘুমাতে পারে না! তার গরম পছন্দ। আমাদের চৌদ্দগুষ্টির মধ্যে যেটা নেই, সে ওটা কীভাবে পেল বুঝতে পারছি না।’
অদ্ভুত ব্যাপার, ঠান্ডায় বিরক্ত আরহামেরই আবার পানি খুব প্রিয়। গোসলের জন্য একবার টাবে নামানো হলে আর উঠতেই চায় না। তামিমের ভাষায়, ‘ওটার ভেতর ২৪ ঘণ্টা রেখে দিলেই বোধ হয় ও বেশি খুশি থাকবে। মাছকে পানি থেকে ওঠালে যে রকম ছটফট করতে থাকে, আমার ছেলের অবস্থাও হয় সেই রকম।’

আরহাম আসার পর তামিমের জীবনে ওলট-পালট ঘটেছে আরও একটা। ঘরে একটু হইচই করা, জোরে কথা বলা তামিমের স্বভাব। আর এখন হাঁটাহাঁটিও করতে হচ্ছে পা টিপে টিপে। কথা বলা, কাজকর্ম—সবই আস্তে আস্তে। একটু শব্দে, একটু জোরে কথায় না আবার আরহামের ঘুম ভেঙে যায়! পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ সে। তার দিকে একটু খেয়াল তো রাখতেই হবে। তামিম এখন ঘরে যা-ই করেন ওই একজনের কথা মাথায় রেখেই করেন।
এই দুটি ব্যাপার ছাড়া তামিমের জীবনে এখনো খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারেনি আরহাম। ছেলের ওপর তাই খুবই সন্তুষ্ট বাবা, ‘সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো ও আমাদের ঘুম নষ্ট করছে না। জ্বলায়-টালায়ও কম। খুব ভোরে উঠে গেলেও রাতে চুপচাপ ঘুমায়।’
আরহামের আকিকা অনুষ্ঠানেও তার এই শান্ত স্বভাবের প্রমাণ মিলেছে। পুরো অনুষ্ঠানেই চুপচাপ। এদিক-সেদিক তাকিয়ে যেন দেখছিল বাবা তার নাম রাখার উপলক্ষ্যটাকে কেমন ঝলমলে করলেন। তা তামিম আয়োজনের ত্রুটি রাখেননি।

দাদি ও নানির কোলে আরহাম
দাদি ও নানির কোলে আরহাম


৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন হোটেলে খান পরিবারের জাঁকজমকপূর্ণ সেই উত্সবে অন্তত হাজার দুয়েক মানুষ আমন্ত্রিত ছিলেন সেদিন। আলোর ঝরনাধারায় ভেসেছে পুরো হলরুম।
সেই অনুষ্ঠানেই আবিষ্কৃত হলো মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ব্যাপার। ক্রিকেট মাঠে মাঝে মাঝে দুর্দান্ত সব ক্যাচ নেন যিনি, যাঁর হাতে ব্যাট মানে তলোয়ার; সেই তামিমের কি না হাত কাঁপছে ছেলেকে কোলে নিতে গিয়ে! হ্যাঁ, আরও অনেক বাবার মতো তিনিও এই একটা জায়গায় দুর্বল। দুই-তিন মিনিটের বেশি কোলে রাখতে পারেন না ছেলেকে।
এ নিয়ে স্ত্রী আয়েশার টিপ্পনী সহ্য করতে হয় নিয়মিত। তামিমের পাল্টা জবাবও তৈরি থাকে। ছেলের কান্নাকাটি থামাতে নাকি ওই দুই-তিন মিনিটই যথেষ্ট, ‘একদম ছোট বাচ্চাদের আমি কখনোই কোলে নিতে পারি না। ওদের শরীর খুব নরম থাকে তো, তাই ভয় লাগে।
তবে আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে আমি খুব গর্ব বোধ করি। আমার কোলেই ও বেশি স্বস্তিতে থাকে। আমি কোলে নিলেই ওর কান্নাকাটি থেমে যায়। আয়েশাকে বলি, দেখো, আমার কোলেই ও বেশি কমফোর্টেবল।’
আরহামের জন্মের এক দিন পরই তাকে ছেড়ে ব্যাংকক থেকে এশিয়া কাপ খেলতে ঢাকায় চলে আসেন তামিম। ক্রিকেটারদের জীবনের একটা ট্র্যাজেডি বোধ হয় এটাও যে পরিবারের সঙ্গে আনন্দের ক্ষণগুলো সব সময় উপভোগ করা হয় না। এখনো অনুশীলনসহ নানা কাজে দিনের অনেকটা সময় বাইরে কাটাতে হয় তামিমকে। বড় হতে হতে আরহামও নিশ্চয়ই বুঝবে ঘরের চেয়ে বাবার কাজটা বাইরেই বেশি। দেশের মানুষকে আনন্দে ভাসানোর জাদুর কাঠি যে তাঁর হাতে!

বাবা ইকবাল খানের স্মৃতির বিশাল এক অ্যালবাম ঝোলানো আছে তামিমের ঘরের দেয়ালে। আছে তাঁর নিজের কীর্তির অজস্র স্মারক আর ছবিও। আরহাম বড় হবে আর দেখবে বাপ-দাদাদের কীর্তি। হয়তো হতে চাইবে তাঁদের চেয়েও বড়। আর সব বাবার মতো তামিমও নিশ্চয়ই সেটাই চাইবেন। সন্তানের সাফল্যের আলোয় আলোকিত হবে তাঁর নাম।

এখন তামিমের ছেলে আরহাম, একদিন হয়তো উল্টো তামিমের পরিচয় হয়ে যাবে ‘আরহামের বাবা।’

তামিম ইকবালের চেয়েও বড় হোক আরহাম ইকবাল।

তামিম ও আয়েশার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।  ছবি: রেমিনিসিন ফটোগ্রাফি
তামিম ও আয়েশার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। ছবি: রেমিনিসিন ফটোগ্রাফি