কেয়ারলেস ক্যাজুয়াল!

এখনকার তরুণেরা এমন ক্যাজুয়াল পোশাক বেশি পছন্দ করেন। মডেল: শাওন
এখনকার তরুণেরা এমন ক্যাজুয়াল পোশাক বেশি পছন্দ করেন। মডেল: শাওন

আসছি, বলেই বেরিয়ে পড়া যায় যে পোশাকে সেটাই কি ক্যাজুয়াল পোশাক? এমন পোশাকের দিকেই কি বেশি ঝুঁকছেন এই সময়ের তরুণেরা! যাঁরা পরিপাটি থাকতে ভালোবাসেন, তাঁরা এসব দেখে নাক সিটকালেও তা আমলেই নিচ্ছেন না আজকের তরণেরা। তাঁদের পোশাক আর হাবভাব দেখে অন্তত তেমনটাই মনে হয়। ক্যাজুয়াল পোশাকের মধ্যেও আছে নানান ধরন। ক্যাজুয়াল, স্মার্ট ক্যাজুয়াল ও বিজনেস ক্যাজুয়াল। স্ট্রিট ওয়্যারকেও অনেকে আবার ক্যাজুয়াল পোশাকের আওতায় ফেলেন। তবে দেশ-বিদেশে এই সময়ের তরুণদের মধ্যে সম্ভবত ক্যাজুয়ালের আরও একটি ধরন যোগ হচ্ছে, আর সেটা হলো ‘কেয়ারলেস ক্যাজুয়াল’। হোক তা পোশাকে কিংবা অন্যের সঙ্গে আলাপের সময়। খুব বেশি ফরমাল হয়ে বসে না থেকে, দ্রুতই অন্যদের সঙ্গে মিশে যাওয়া।
মডেল শাওন যেমন ভালোবাসেন সব সময় ক্যাজুয়াল থাকতে। তাঁর মতে, ‘মানুষের সঙ্গে মিশতে আমার ভালো লাগে। আবার পোশাকের ক্ষেত্রেও ভালোবাসি ক্যাজুয়াল থাকতে। বটম এবং টপ—দুটি পোশাকে যদি সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে ক্যাজুয়ালেও স্মার্ট দেখায়। নিজের জন্য সাধারণত ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট ইত্যাদিতে মৌসুমটা মাথায় রেখে কাপড় বেছে নিই। গরমে সাধারণত হালকা রঙের সুতির পোশাক বেশি পরি।’ শুধু শাওনই নন, এই সময়ের অনেক তরুণ-যুবাই কেয়ারলেস ক্যাজুয়াল থাকতে ভালোবাসেন। কিছুদিন আগেও শরীরের সঙ্গে ফিটিং পোশাক পরার চল ছিল। ক্যাজুয়াল তরুণেরা সে ধারাটি ভেঙে দিচ্ছেন। সেখানে এখন জায়গা করে নিয়েছে হাঁটু অবধি ঝোলানো, ঢিলেঢালা আলখাল্লা ধরনের পোশাক। শুধু ছেলেরাই নয়, ক্যাজুয়াল ভাবটা মেয়েদের মধ্যেও রয়েছে। একটা পোশাক হয়তো পরল, কিন্তু চুলটা এলোমেলো। ওই এলো চুলই কেউ হয়তো পেঁচিয়ে নিচ্ছেন সুবিধামতো। এই সময়ের জনপ্রিয় পশ্চিমা সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী সেলেনা গোমেজের কথাই ধরা যাক। সব সময় ফিটফাট থাকলে নাকি নিজেকে পুতুল পুতুল মনে হয়। তাই অনেক সময় বাইরে চলে আসেন হাতের কাছে যা পান সেটা পরেই।

মডেল: তৌসিফ
মডেল: তৌসিফ

গাড়িতে বসেই লিপস্টিক বা হালকা মেকআপ নেন মাঝেমধ্যে। কখনো সেটাও করেন না। তাড়া থাকলে ঘর থেকে বের হতে হতেই হাত দিয়ে চুলটা ব্যান্ডে পেঁচিয়ে বা বেণি করে নেন। তরুণ তারকারাই যখন নিজেকে নিয়ে এমন ভাবনাহীন, সেখানে অন্য তরুণেরা তো আরও এক কাঠি সরেসই হবেন। ক্যাজুয়াল মুহূর্তের নানা ধরনের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এ-লেভেলের শিক্ষার্থী নিশাত তারান্নুম। আলাপের শুরুতেই নিশাত জানিয়ে দিল—‘পারিবারিক কোনো দাওয়াতে বেশি পরিপাটি থাকতে হলে আমি সেখানে না যাওয়ার চেষ্টাই করি। কারণ, আমার খুব বেশি পরিপাটি গোছালো থাকতে ভালো লাগে না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর হই-হুল্লোড় করতে ভালোবাসি। খুব বেশি ফরমাল দাওয়াতে আমি ঠিক স্বস্তি পাই না।’
এই সময়ের আলোচিত আরেক তারকা জাস্টিন বিবারের কথাই ধরা যাক। জাস্টিন তাঁর আচার-ব্যবহারের পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছেদ নিয়েও কম সমালোচিত নন। তবে এসব নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে ঠিক মনে হয় না। কোমরের অনেক নিচে পরা প্যান্টের ওপরে উঠে আসা আন্ডারওয়্যার থেকে শুরু করে লম্বা ঢোলা টি-শার্ট—সবই পরছেন দেদারসে। কনসার্টের স্টেজ থেকে মাঠঘাট—সবখানে পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে ক্যাজুয়ালই বেশি থাকেন। গত মার্চে একটি কনসার্টে বিবার তো স্কার্ট পরেই মঞ্চে উঠে গেছেন। প্রিয় তারকার এমন কেয়ারলেস উপস্থাপনার প্রভাব ভক্তদের ভেতরেও পড়ে। প্রিয় তারকাকে অনুকরণ করতে গিয়ে এই প্রজন্মের তরুণদেরও ক্যাজুয়াল পোশাকে বেশি দেখা যায়।
ক্যাজুয়াল পোশাকের বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান রোহানের ভাষ্য, ‘খুব বেশি চাপে না পড়লে ফরমাল পোশাক পরতে ইচ্ছে করে না। প্রেজেন্টেশন বা মৌখিক পরীক্ষা থাকলে ফরমাল পোশাক পরি। এমনিতে নানা ধরনের টি-শার্ট, পোলো শার্ট, জিনস বা গ্যাবার্ডিনই আমার পছন্দের পোশাক। গরমে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের সঙ্গে নানা ধরনের শার্ট বা টি-শার্ট পরেই ঘোরাফেরা বা আড্ডা দিই বেশি।’
প্রাণ খুলে আড্ডা বা পোশাকের স্বাধীনতায় ক্যাজুয়াল থাকাটা আপনার ইচ্ছা। তবে কোথায়, কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন, সে বিষয়ে একটু সচেতন থাকলে বেশি সুবিধাই মিলবে।
সূত্র: হলিউড লাইফ, স্টাইল বিস্ট্রো, ইনস্টাইল