উপভোগ করছেন না বলে ছাড়লেন কোটি টাকার চাকরি
নেটফ্লিক্সে মোটা বেতনের চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার পর মাইকেল লিনের আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা মনে করেছিলেন লিন পাগল হয়ে গেছেন। লিনের মা ও বাবা বিষয়টা ভালোভাবে নেননি। যে কঠোর পরিশ্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেটা বুঝি ব্যর্থ হয়ে গেল বলে মনে হয় তাঁদের।
লিনের সহকর্মীরাও তাঁকে বলেছিলেন, আরেকটি চাকরির ব্যবস্থা না করে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত ভালো নয়। তাঁদের সবাই তাঁকে নিয়ে চিন্তিত হলেও কথা শোনেননি লিন।
লিন এর আগে আমাজনে কাজ করেছেন। আমাজনের চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সালে তিনি নেটফ্লিক্সে যোগ দেন। সেখানে বছরে তাঁর বেতন ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটা প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বেতন না নিয়ে ইচ্ছেমতো ছুটি নেওয়ার সুযোগও ছিল। লিনের কথায়, নেটফ্লিক্সে কাজ করাটা ছিল বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্নের মতো। কিন্তু উপভোগ করছেন না জানিয়ে নেটফ্লিক্স ছাড়ার আট মাস পর এসে তাঁর মনে হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারকে মাইকেল লিন বলেন, ‘পদোন্নতি আর সান ফ্রান্সিসকোর সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় একটি বাড়ি পেয়ে আমি খুশিই ছিলাম। তখন মনে হয়েছিল পেশাজীবনের বাকি সময়টা নেটফ্লিক্সে কাটিয়ে দেব। প্রথমে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিষয় শিখছিলাম। কিন্তু চাকরির দুই বছরের মাথায় সব কেমন যেন হতে থাকে। প্রকৌশলীর কাজ হয়ে যায় শুধু কপি ও পেস্ট করা।’ মূলত এমন হওয়ার পর থেকে চাকরি ছাড়ার কথা মাথায় আসে বলে জানান তিনি।
এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় করোনা মহামারির প্রকোপ। লিনের তখন মনে হতে থাকে যেসব সুবিধা তিনি পেতেন, তা আর পাচ্ছেন না। অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগও নেই। তখন শুধু একটা বিষয় ছিল সারাক্ষণ কাজ আর কাজ। তিনি তখন আর কাজটা উপভোগ করতে পারছিলেন না। এতে ধীরে ধীরে লিন কাজে আগ্রহ হারাতে থাকেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাঁর কাজে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পরিস্থিতি আঁচ করতে পারছিলেন লিনের ঊর্ধ্বতন।
এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে ঘটে অস্বস্তিকর আরেক ঘটনা। যাঁর অধীন লিন কাজ করেন সেই ব্যবস্থাপক তাঁর কাজের মূল্যায়ন করছিলেন। তখন লিনের সঙ্গে তাঁর ব্যবস্থাপকের এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর লিন ব্যবস্থাপক বদলে অফিসের অন্য দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্ত এ ক্ষেত্রেও তিনি সফল হতে পারেননি।
কাজের মূল্যায়ন নিয়ে ব্যবস্থাপকের সঙ্গে ওই ঝামেলার দুই সপ্তাহ পর নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শুরু করেন লিন। এরপর তিনি ব্যবস্থাপকের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দুজন বৈঠকে বসেন। লিন প্রস্তাব দেন কোম্পানি তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কথা অর্থাৎ তাঁকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে। লিনের সঙ্গে শেষ বৈঠকে নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ আসন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। বরখাস্ত হওয়ার সব ধরনের সুবিধা পান লিন।
নেটফ্লিক্স ছাড়ার পর লিনের মধ্যে এমন উদ্বেগ দেখা দেয় যে তার হয়তো কোনো সামাজিক জীবন থাকছে না। কারণ, এর আগে কাজ নিয়ে তাঁর জীবন আবর্তিত ছিল। এখন তো কাজ নেই। কিন্তু ঘটে উল্টোটা।
নেটফ্লিক্স ছেড়ে চলে আসার আট মাস পরে এসে লিন এখন নিজে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। নিজের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন একজন উদ্যোক্তা। এ কাজের অন্য উদ্যোক্তা, লেখক ও সৃজনশীল মানুষসহ অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তিনি।