করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ছয় মাসের বেশি সময় পরও আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি করোনার মৃদু উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। আগের গবেষণাগুলোতে করোনা রক্তে জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কথা জানা যায়।
করোনার প্রভাব যে মানবদেহে অনেক দিন পর্যন্ত থাকে, নতুন এই গবেষণার মাধ্যমে সেটাই দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি করা হয়েছে সুইডেনে।
এটা করতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়া ১০ লাখের বেশি মানুষের তথ্যের সঙ্গে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা এমন ৪০ লাখের বেশি মানুষের তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত যেসব ব্যক্তির ফুসফুসে সংক্রমণের (পালমোনারি এমবোলিজমের) উচ্চ ঝুঁকি ছিল, তাঁদের করোনা সংক্রমণের ছয় মাসের বেশি সময় পরও শরীরে রক্তের জমাট বাঁধার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, যা ফুসফুসের রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এখানে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এটা হলে সাধারণত পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। করোনা সংক্রমিত হওয়ার তিন মাস পর্যন্ত এ রকম ঝুঁকি বাড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বিত প্রভাবের ফলে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পালমোনারি এমবোলিজমের ঝুঁকি ৩৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি বেড়েছে পাঁচ গুণ। তবে এই ক্ষেত্রে যাঁরা কোভিডের গুরুতর উপসর্গে ভুগছিলেন এবং যাঁদের আগে থেকে ঠান্ডার উপসর্গ ছিল, তাঁদের ঝুঁকি ছিল বেশি।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় পরবর্তী ঢেউয়ের সময় রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা কম ছিল বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, টিকা নেওয়া এবং সময়ের সঙ্গে আরও ভালো চিকিত্সাসেবা নেওয়ার কারণে এই শঙ্কা ধীরে ধীরে কমেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গবেষণায় বলা হয়েছে, গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ২৯০ গুণ বেশি। আর মৃদু উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চেয়ে এই ঝুঁকি ৭ গুণ বেশি। তবে মৃদু উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অভ্যন্তরে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুইডেনের উমেয়া ইউনিভার্সিটির প্রধান গবেষণা মূল্যায়নকারী অ্যান-মারি ফর্স বলেছেন, টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের চেয়ে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের রক্তে জমাট বাঁধার ঝুঁকি অনেক বেশি। ফলে টিকা নেওয়ার একটি সত্যিকার কারণ রয়েছে।