করোনা সামাল দিয়ে নজর কাড়া ইসরায়েলও এখন ধুঁকছে
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার দিক দিয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ইসরায়েল। টিকা পেয়েছেন দেশটির বেশির ভাগ মানুষ।
এমনকি সবার আগে বুস্টার ডোজ দেওয়াও শুরু করে তারা। ভাইরাসটি কীভাবে সামাল দিতে হবে, সে বিষয়ে ইসরায়েলের দিকে নজর রাখছিল বিশ্ব। তবে এত কিছুর পর করোনার নতুন ধরন অমিক্রন সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে পারেনি দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুনভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ। রেডিওতে লাপিদ বলেছেন, তিনি সুস্থ এবং বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
এদিকে অমিক্রনের দাপটে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরও নতুন করে লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করেনি ইসরায়েল। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ ছাড়াই করোনার বিস্তার ঠেকাতে পারবে দেশটি।
ইসরায়েলের পরিকল্পনা কী
গত নভেম্বরে আফ্রিকায় অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল। দেশটির বার ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরিল কোহেন সে সময় একে ‘ভালো পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এর ফলে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা দেরিতে এসেছে। এ ছাড়া করোনার আসন্ন ঢেউ সামলাতে প্রস্তুতির সময় পাওয়া গেছে। করোনা চিকিত্সার সরঞ্জামও এ সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা গেছে।
তবে সংক্রমণ বেড়েছে। কোহেনের পর্যবেক্ষণ, আগের মতো এবার ইসরায়েল সরকার যথেষ্ট পরিমাণ করোনা পরীক্ষা করেনি। এ নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যেও হতাশা দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক আকাশসীমা সাময়িক বন্ধের পর তা আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। অনুমতি দেওয়া হয়েছে পানশালা, রেস্তোরাঁ, জিম, উপাসনালয় ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার।
এদিকে স্থানীয়ভাবে শনাক্ত যখন রেকর্ড ছুঁয়েছে, তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট সতর্ক করেছেন, সংক্রমণ আরও বাড়বে। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ লাখের মতো মানুষ করোনা আক্রান্ত হতে পারে। পাশাপাশি বেনেট এ–ও বলেছেন, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া আর তেমন কিছুই হবে না।
মঙ্গলবার বেনেট জানান, এই মুহূর্তে ইসরায়েল তিনটি নীতি মেনে চলছে। সেগুলো হলো অর্থনীতি চালু রাখা, বৃদ্ধসহ ঝুঁকির মুখে থাকা লোকজনকে করোনা থেকে সুরক্ষা দেওয়া এবং শিশুদের দেখভাল করা।
বিধিনিষেধ নিয়ে সিদ্ধান্ত ভোগাবে
করোনার চালমান দাপটের মধ্যে কোনো বিধিনিষেধ জারি না করার ইসরায়েলি সিদ্ধান্ত আসছে দিনগুলোতে ভোগাবে বলে মনে করছেন ইসরায়েলি অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক হেলথ ফিজিশিয়ানের চেয়ারম্যান হাগাই লেভাইন। তাঁর মতে, করোনা নিয়ে প্রতিনিয়ত যদি নতুন নীতিমালা আসে, তাহলে ইসরায়েল সরকার সমস্যার মুখে পড়বে। কারণ, বারবার নীতি বদলালে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এটাও মনে হয় যে সরকারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আদতে এটা সত্য। কারণ, অমিক্রনের দাপটের মুখে নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্ভব নয়।
সমাধান টিকার চতুর্থ ডোজ
ইসরায়েলের ৮০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ করোনা টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন। অর্ধেকের বেশি বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। এর মধ্যেই গত মাসেই প্রধানমন্ত্রী বেনেট জানান, অমিক্রন মোকাবিলায় চতুর্থ ডোজ দিয়ে সারা বিশ্বের পথপ্রদর্শক হবে ইসরায়েল।
ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ঝুঁকিতে থাকা লোকজন চতুর্থ ডোজের আওতায় এসেছেন। যদিও বাড়তি এ ডোজের প্রভাব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য অপ্রতুল। এ নিয়ে লেভাইন বলেন, ‘এটি কখনো কখনো কাজে দেয়। যেমনটি হয়েছিল প্রথম ও তৃতীয় ডোজের ক্ষেত্রে। সেগুলো দ্রুত দেওয়া হয়েছিল এবং ফল পাওয়া গিয়েছিল।’
ইসরায়েলের শেবা মেডিকেল সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার বুস্টার ডোজ দিলে শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। তবে এরপরও চতুর্থ ডোজ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন অধ্যাপক সিরিল কোহেন। তাঁর মতে, নতুন আরেকটি ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সময় এখনো আসেনি।