টিকা পেতে গরিব দেশের পাশে ইউরোপীয়ান কমিশন

করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে সহযোগিতা করছে ইউরোপিয়ান কমিশন। দরিদ্র দেশগুলোতে করোনার টিকা সাহায্য হিসেবে ৪০ কোটি ইউরো বা ৮ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার সমান অবদান রাখবে সংস্থাটি।

গত শুক্রবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভ্যাক্সে যে অবদান রাখা হবে, তার মধ্যে ২৩ কোটি ইউরো ঋণ হিসেবে দেবে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। ‘টিম ইউরোপ’ ব্যানারে এই ঋণ দেওয়া হবে। টিকার বৈশ্বিক ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টার অংশ হবে এটি। এই অর্থ যোগ্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে স্থানান্তরিত হবে। বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বাকি ১৭ কোটি ইউরো যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট থেকে নিশ্চয়তা হিসেবে।

কমিশনের পক্ষ থেকে উৎপাদনকারীদের তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে টিকা সব দেশে সরবরাহের জন্য আহ্বানের পাশাপাশি অবাধে টিকা দেওয়া ও উপকরণ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই এই রোগ মোকাবিলায় টিকা ও চিকিৎসার ওষুধ উদ্ভাবন ও সংগ্রহে এককভাবে কাজ করছে।

১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান কমিশনের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কোভ্যাক্সে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তাতে বলা হয়, সাশ্রয়ী টিকার ন্যায়সংগত সুবিধা পেতে কোভ্যাক্সে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। গত ৩১ আগস্ট এতে আগ্রহ দেখানোর পাশাপাশি ৪০ কোটি ইউরো অবদান রাখার কথা বলা হয়েছিল। কমিশন এবং ২৭টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে একটি যৌথ প্রয়াস হিসেবে টিম ইউরোপ এ অবদান রাখবে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেছেন, টিকা পাওয়া যথেষ্ট নয়। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, বিশ্বজুড়ে নাগরিকেরা টিকা পেয়েছেন। কোভ্যাক্স সুবিধার প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি থাকবে যেন সব নাগরিক টিকা সুবিধা পায়। সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই নিরাপদ নই।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ১ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করে যে তারা কোভ্যাক্সে অংশ নেবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই এই রোগ মোকাবিলায় টিকা ও চিকিৎসার ওষুধ উদ্ভাবন ও সংগ্রহে এককভাবে কাজ করছে।

আরও পড়ুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি মোকাবিলায় সব দেশেরই উচিত হবে কোনো একটি দেশের সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করার বদলে সব দেশের জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিপূর্ণ অংশের জন্য টিকার ব্যবস্থা করাই নীতি হিসেবে গ্রহণ করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিকল্পনা করা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।

গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, তাদের উদ্যোগ কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশ আলোচনা করছে।

মহামারি কোভিড-১৯-এর টিকা কেনার জন্য ডব্লিউএইচও ‘কোভ্যাক্স’ নামে যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে, এতে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বাধা আছে।

তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট করোনা টিকা উৎপাদনের কাজ চলছে এবং সেগুলো উন্নত পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র একাই টিকা পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ঘোষণা করেছে যে কোভিড-১৯-এর টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে সংস্থাটি নেতৃত্ব দেবে। সংস্থাটি বলছে, টিকা যখন পাওয়া যাবে, তখন যেন সব দেশ নিরাপদে, দ্রুত ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা পেতে পারে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক টুইটে বলেন, ‘এটি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সব সরকার, উৎপাদক ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের অংশীদারত্ব। টিকার জন্য আমাদের সম্মিলিত সাধনায় ইউনিসেফ তার অনন্য শক্তিগুলো কাজে লাগাবে যাতে সব দেশ নিরাপদ, দ্রুত ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকার প্রাথমিক ডোজগুলো পেতে পারে।’