ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ চান প্রবাসী বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা। এ বিষয়ে তাঁরা নিউইয়র্কে একাধিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জ্যাকসন হাইটসে গত ৬ নভেম্বর এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ১১ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থায়ী সরকারি কার্যালয় ট্রাম্প টাওয়ারের সামনেও গত ২৭ নভেম্বর বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসের
বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। ১১ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সংগঠনের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তা বন্ধের ব্যাপারে তাঁর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করা হয়েছে। এতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে একজন ‘সংবেদনশীল ও দৃঢ়চেতা’ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করে আশা প্রকাশ করা হয়, মার্কিন সরকার ‘শক্তি ও কূটনীতির মাধ্যমে’ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে।
এ ব্যাপারে ট্রাম্প অথবা তাঁর কোনো প্রতিনিধির তরফ থেকে কোনো বক্তব্য পেয়েছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে প্রবাসী সংখ্যালঘুদের অন্যতম সংগঠক শীতাংশু গুহ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাম্পের একজন প্রতিনিধির হাতে তাঁরা স্মারকলিপিটি দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি। তিনি বলেন, একটা অব্যাহত লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই তাঁরা ট্রাম্প টাওয়ারে এসেছেন। একই উদ্দেশ্যে তাঁরা হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের উদ্যোগ নিয়েছেন। ‘পরবর্তী মার্কিন প্রশাসন যদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা বিষয়ে সম্যক অবহিত থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগ্রহী হবেন’—এ বিশ্বাস তাঁদের রয়েছে।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের কাছে তাঁরা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের আশা করেছিলেন। কিন্তু কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সরকারের চোখের সামনে সংখ্যালঘুদের জানমাল আক্রান্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন, এ কথা তাঁরা জানেন। কিন্তু সে কারণে ট্রাম্পের সাহায্য চেয়ে তাঁরা স্মারকলিপি দেননি। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন নীতির ব্যাপারে তাঁর সম্ভাব্য ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই তাঁরা ট্রাম্পের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ কথা মোটেই ঠিক নয়, সব প্রবাসী সংখ্যালঘু বাংলাদেশি ট্রাম্পের সমর্থক। কেউ কেউ হতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন।
প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ মনে করেন, ট্রাম্পের নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ আনন্দিত হয়েছে, এ কথা তিনি মনে করেন না। ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা এ ব্যাপারে উল্লাস প্রকাশ করেছে, কোথাও কোথাও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে বলে শোনা গেছে। যদি বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের কেউ তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাতে তিনি আপত্তির কিছু দেখেন না। কিন্তু ট্রাম্প মুসলিমবিদ্বেষী সে কারণে যদি তাঁকে সমর্থন করা হয়, সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। এ কাজে দলমত-ধর্মনির্বিশেষ সবাইকে হাত লাগাতে হবে। তিনি বলেন, ‘এটি সকল বাংলাদেশির সম্মিলিত সংগ্রাম।’