প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানা। ছবি: এএফপি
প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানা। ছবি: এএফপি

প্রিন্সেস ডায়ানা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য  থাকার সময় তাঁর  জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল। ছিলেন গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। স্বামী প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরও সেই জনপ্রিয়তায় কখনো ভাটা পড়েনি। সাধারণ মানুষের কাছে তখনো তিনি ‘প্রিন্সেস’ ছিলেন।

মৃত্যুর এত বছর পর আবার আলোচনায় ডায়ানা। এবার একটি টিভি চ্যানেল তাঁর ব্যক্তিগত ভিডিও চিত্র সম্প্রচার করার কথা বলেছে। এই ভিডিওতে যৌনজীবন ও চার্লসের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কথা বলেছিলেন ডায়ানা। আর এ নিয়ে ডায়ানার পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও ব্রিটিশ রাজপরিবার বেজায় নাখোশ। শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ব্রিটিশ চ্যানেল ফোর এই প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচার করবে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে চ্যানেলটি বলছে, এই ভিডিও চিত্রটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। এর মধ্য দিয়ে ডায়ানার জীবনের নতুন কিছু দিক উন্মোচিত হবে। ৩১ আগস্ট ডায়ানার ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। সেই দিনটিকে উপলক্ষ করেই আগামী রোববার সম্প্রচারিত হবে এই প্রামাণ্যচিত্র।

এই ভিডিও নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ট্যাবলয়েড পত্রিকা ডেইলি মেইল এ নিয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে। তার শিরোনাম হলো, ‘চার্লস ও ডায়ানা সাত বছর যৌন সংসর্গ করেননি’। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, হ্যারির জন্মের পর চার্লস ও ডায়ানার সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল। ওই সময়ে তাঁদের মধ্যে ভালোবাসা ছিল না, ছিল শুধু খোঁচাখুঁচি।

সমালোচকেরা বলছেন, এই ভিডিও সম্প্রচার করা একধরনের ‘অনধিকার প্রবেশ’। বাকিংহাম প্যালেসের সাবেক প্রেস সচিব ডিকি আরবিটার বলেছেন, এ ধরনের ভিডিও সম্প্রচার করা ডায়ানাকে ‘হেয়’ করার শামিল। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব বিষয়ই জানার দরকার নেই। ব্যক্তিগত বিষয় গোপনই রাখা উচিত।’ ডিকি ধারণা করছেন, ক্যামেরার সামনে ডায়ানা নিজের ব্যক্তিগত জীবনের গোপন কথা বলছেন, এমন ভিডিও দেখার জন্য অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়বেন।

অবশ্য এ মতের বিরোধিতাও করছেন অনেকে। প্রিন্সেস ডায়ানার সাবেক দেহরক্ষী কেন ওর্ফ মনে করেন, বেঁচে থাকলে এই সম্প্রচারে আপত্তি করতেন না ডায়ানা। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি উল্টো এটি পছন্দই করতেন। প্রথমবারের মতো তিনি হয়তো বলতেন, আমি যা বলেছি, তা ঠিকভাবে শুনতে পারছে মানুষ।’

এই প্রামাণ্যচিত্রের নাম রাখা হয়েছে, ‘ডায়ানা: ইন হার ওন ওয়ার্ডস’। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে কেনসিংটন প্যালেসে টুকরো টুকরো ভিডিও চিত্রগুলো ধারণ করা হয়েছিল। সেটিই এখন প্রামাণ্যচিত্রে রূপ নিয়েছে। এর কিছু অংশ ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত হয়েছিল। তবে চ্যানেল ফোর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে কখনো দেখা যায়নি, এমন কিছু ফুটেজ এতে রয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেনসার এই ভিডিও চিত্র সম্প্রচার না করার জন্য চ্যানেল ফোরের কাছে আরজি জানিয়েছিলেন। তাঁর আশঙ্কা, এই প্রামাণ্যচিত্র দেখে কষ্ট পেতে পারেন ডায়ানার দুই ছেলে, প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি।

প্রিন্স হ্যারির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া ডায়ানার ছবি।
প্রিন্স হ্যারির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া ডায়ানার ছবি।

ডায়ানার দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী রোজা মংকটন বলেন, ‘এটি জনসাধারণের মধ্যে সম্প্রচারের বিষয় নয়।’ তিনি দাবি করেছেন, ডায়ানা স্রেফ চিকিৎসার অংশ হিসেবে এই ভিডিও চিত্রগুলো রেকর্ড করেছিলেন।

এ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন প্রিন্সরা। রাজপরিবারও মুখে কুলুপ এঁটেছে।

বলা হচ্ছে, এই প্রামাণ্যচিত্রে চার্লসের সঙ্গে যৌনজীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ডায়ানা। যৌন সংসর্গের সময় চার্লসের আচরণ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তিনি। ডায়ানা বলেছেন, বিয়ের আগে মাত্র ১৩ বার দেখা হয়েছিল তাঁদের। তিনি এ-ও স্বীকার করেছেন যে চার্লসের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার এবং বিচ্ছিন্নতার চাপ থেকে বেশি বেশি খাওয়ার রোগে পেয়ে বসেছিল তাঁকে।

এত বিতর্কের জবাবে চ্যানেল ফোর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই প্রামাণ্যচিত্রে ব্যবহার করা ভিডিওগুলো ব্যক্তিগত। আমরা সচেতনভাবেই এগুলো বিবেচনা করেছি। এখানে স্বকণ্ঠে নিজের জীবনের গল্প বলেছেন ডায়ানা। এর মধ্য দিয়ে তাঁর ব্যক্তিত্বের একটি অনন্য চিত্র ফুটে উঠবে।’

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে