‘তারা ভেবেছিল, আমি মারা গেছি’

যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে হাইতির বিমানবন্দরে মার্টিন মইসি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির স্ত্রী মার্টিন মইসি বলেছেন, হত্যাকারীরা ভেবেছিল তিনি মারা গেছেন। ৭ জুলাই রাতে নিজ বাসভবনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসি। সে সময় আহত হন তাঁর স্ত্রী মার্টিন মইসি। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত শনিবার তিনি দেশে ফেরেন।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্টিন মইসি বলেন, ‘হত্যাকারীরা যখন চলে যাচ্ছিল, তখন তারা ভেবেছিল, আমি মারা গেছি।’ প্রেসিডেন্ট মইসি হত্যাকাণ্ডের পর এই প্রথম কোনো সাক্ষাৎকার দিলেন মার্টিন।

ওই ঘটনায় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৩০ থেকে ৫০ জন নিরাপত্তাকর্মীদের কারোরই কিছু হয়নি। এতে বিস্ময় প্রকাশ করে মার্টিন মাইসি জানান, নিরাপত্তাকর্মীদের কেউ নিহত হয়নি, এমনকি কেউ আহতও হয়নি। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাধর কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাই তাঁকে হত্যা করতে পারে।’

সম্প্রতি জোভেনেল মইসির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জিন লগুয়েল সিভিলকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। মইসি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাঁকে রাজধানী পোর্ট-আ-প্রিন্সের কাছে দেলমাসের একটি নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে।
ওই ঘটনায় বেসামরিক ব্যক্তিসহ ১২ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে হাইতির পুলিশ।

মইসি হত্যাকাণ্ডে ২৮ জন ভাড়াটে ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে হাইতির পুলিশ। তাদের মধ্যে ২৬ জন কলম্বিয়ার। আর ২ জন হাইতি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জিন লগুয়েল সিভিল ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেদিন মাঝরাতে সশস্ত্র হামলাকারীরা প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষীদের কোনো বাধা ছাড়াই মইসিকে হত্যা করে।

সাক্ষাৎকারে মার্টিন মইসি বলেন, হামলার সময় তাঁরা ঘুমাচ্ছিলেন। গুলির শব্দে তাঁদের ঘুম ভাঙে। এ সময় প্রেসিডেন্ট সাহায্যের জন্য তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের ডাকেন। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে আসার আগেই বন্দুকধারীরা শোবার কক্ষে ঢুকে গুলি চালানো শুরু করে।

মার্টিন মইসি আরও বলেন, তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। একই কক্ষে ততক্ষণে তাঁর স্বামী হয় মারা গেছেন বা মৃত্যু পথযাত্রী। তাঁর সে সময় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কারণ, তাঁর মুখ ভরে রক্ত বের হচ্ছিল। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা কী নিয়েছিল, তা তিনি জানেন না। তবে প্রেসিডেন্টের কাগজপত্র রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি তাকের কাছে তারা গিয়েছিল। তিনি জানান, এ সময় হামলকারীরা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছিল, ফোনেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।

মার্টিন মইসি বলেন, তিনি হত্যাকারীদের জানাতে চান যে তিনি ভীত নন। সুস্থ হয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা ধরা পড়ুক। সেটা করতে না পারলে যিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন, তাঁকে হত্যা করা হবে।’ মার্টিন মইসি বলেন, ‘তারা এমন ঘটনা একবার ঘটিয়েছে, আবারও ঘটাবে।’

মইসি হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার হাইতির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যারিয়েল হেনরি। দায়িত্ব পাওয়ার পর নিহত প্রেসিডেন্ট মইসি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি। হেনরি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
জোভেনেল মইসি ২০১৭ সাল থেকে হাইতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর পদত্যাগ দাবি করে দেশটিতে একাধিকবার বিক্ষোভ হয়। জোভেনেল মইসি নিহত হওয়ায় হাইতির সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ।

এদিকে মইসি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিরাপত্তার পাশাপাশি তদন্তসংক্রান্ত কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে হাইতি। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যার তদন্তে এফবিআইয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাইতিতে পাঠানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র হাইতিতে সেনা পাঠাবে কি না, তা নিশ্চিত করেননি তিনি। এদিকে জাতিসংঘের কাছেও সেনা সহায়তা চেয়েছে হাইতি।

হাইতির প্রেসিডেন্ট হত্যার পর অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও আইনসভা নির্বাচন সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ বলেছেন, তিনি এখনো দায়িত্বে বহাল আছেন।