‘দস্যুদের আস্তানা’ এখন দেশের সেরা সৈকত
নাম ‘দুর্দশার সৈকত’ (মিজারি বিচ)। হবেই না বা কেন। এককালে এখানেই বয়ে যেত রক্তের বন্যা। ছিল ভয়ংকর সব অপরাধী আর জলদস্যুদের আনাগোনা। তবে দিন বদলেছে। কুখ্যাতি ছাপিয়ে সৈকতটি এখন সেরাদের সেরা। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় সেরা নির্বাচিত হয়েছে এই দুর্দশার সৈকত। খবর সিএনএনের।
সেরা তকমা পাওয়া এই সৈকতের অবস্থান পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, অ্যালবানি শহরের কাছেই। শহরটির প্রকৃতি যেমন নৈসর্গিক, সৈকতটিও নজরকাড়া। চলতি ফেব্রুয়ারিতে দুর্দশার সৈকতকে সেরা ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
সৈকতটির রক্তমাখা ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে ফিরে যেতে হবে কয়েক শ বছর পেছনে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো গড়ে ওঠা শুরু করে ১৭ শতকের শেষের দিক থেকে। ১৮২৬ সালে এসে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বসতি গড়ে তোলা হয় অ্যালবানি শহরে। তবে সেখানে সাধারণ লোকজনের বাস ছিল না। ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের সাজা পাওয়া অপরাধীদের অ্যালবানিতে এনে নানা কাজে লাগানো হতো। তবে কয়েকজন ছিলেন ব্যতিক্রম।
অ্যালবানি শহরের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ সুয়ে লেফরয় বলেন, অপরাধীদের অনেকেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। বসবাস শুরু করেছিলেন অ্যালবানির আশপাশের জঙ্গল ও সমুদ্রসৈকতগুলোতে। এরপর আবার জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। এমনকি জলদস্যুতায়ও নাম লিখিয়েছিলেন।
জলদস্যুতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এস্পের্যান্স বে হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির সভাপতি বেভারলি ড্রাবিক বলেন, সে সময় তিমি শিকারে ব্যবহৃত একটি জাহাজে করে অ্যালবানি শহরে আসেন জন অ্যান্ডারসন নামের এক মার্কিন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে শহরে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরপর অ্যান্ডারসন পালিয়ে যান। গড়ে তোলেন জলদস্যুদের একটি দল। সেই দলে শহরের পলাতক অনেক অপরাধীই নাম লিখিয়েছিলেন। বহু বছর ধরে তাঁরা এ অঞ্চলে জাহাজ লুটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
দুর্দশার সৈকতের কুখ্যাতির পেছনে আরেকটি কারণও রয়েছে বলে জানিয়েছেন লেফরয়। তিনি বলেন, এই সৈকতকে ঘিরে ১৮ শতকের চল্লিশের দশক থেকে ১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত চলত তিমি শিকার। তিমির রক্তে সে সময় লাল হয়ে থাকত সাগরের পানি।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে দস্যুতা বিলুপ্ত। দেখা মেলে না তিমি শিকারিদেরও। অ্যালবানির মেয়র ডেনিস ওয়েলিংটন বলেন, করোনা মহামারির সময় স্থানীয় পর্যটকদের মধ্যে অ্যালবানি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সৈকতের সেরা খেতাব পাওয়ার পর আশা করা হচ্ছে এই অঞ্চলে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা ব্যাপক হারে বাড়বে।