ভূমিকম্প ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপ দেশ হাইতি থেকে অভিবাসনের প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হয়েছিল হাজারো দুর্গত মানুষ। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন হাইতিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ড্যানিয়েল ফুটে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
পদত্যাগপত্রে ড্যানিয়েল লিখেছেন, ‘ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হাইতির অবস্থা আগে থেকেই শোচনীয়। দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসনপ্রত্যাশী দেশটির নাগরিকদের হাইতিতে ফেরত পাঠানো অমানবিক। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারি না।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকো সীমান্ত–সংলগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১৩ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী হাইতিয়ান জড়ো হয়েছে। ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তীব্র গরমের মধ্যে তারা সেখানে একটি সেতুর নিচে অবস্থান করছে। তাদের খাবার ও পয়োনিষ্কাশন–সুবিধা নিশ্চিত করতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের।
গত রোববার থেকে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হাইতিতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। টেক্সাস থেকে ইতিমধ্যে উড়োজাহাজে করে ১ হাজার ৪০১ জনকে হাইতিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরও ধাপে ধাপে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। মার্কিন প্রশাসনের এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন ড্যানিয়েল।
পদত্যাগপত্রে ড্যানিয়েল লিখেছেন, ‘হাইতি একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র। এ পরিস্থিতিতে খাবার, আশ্রয়, অর্থ ছাড়া হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জোর করে ফেরত পাঠানোর অমানবিক প্রক্রিয়া সমর্থন করা যায় না।’
ড্যানিয়েল আরও লিখেছেন, ‘হাইতিয়ানদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।’ একই সঙ্গে তিনি হাইতির রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
২০১০ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয় হাইতির মানুষ। ওই ধ্বংসযজ্ঞের ধাক্কা সামলাতে অনেকেই হাইতি ছাড়েন। অনেকে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় আশ্রয় নেন। পরে উন্নত জীবন ও জীবিকার আশায় হাইতির অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন।
চলতি বছর হাইতির মানুষ আবারও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে। গত জুলাইয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোভেনাল মইসিকে হত্যা করা হয়। এর পর থেকে হাইতিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। আগস্টে আবারও ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় হাইতিতে।