নাচকে কেন ‘সেরা ওষুধ’ বলেন বিশেষজ্ঞরা
নৃত্য শুধু একটি শিল্পমাধ্যম নয়, এটি মানুষের বহুমাত্রিক রোগও নিরাময় করতে পারে। এর প্রধান কারণ হিসেবে নৃত্যকে শরীরচর্চার একটি বড় মাধ্যম বলে বর্ণনা করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলে থাকেন, নাচলে একজন মানুষের রাগ, ক্ষোভ, দুশ্চিন্তা দূর হয়। এ ছাড়া নাচার মাধ্যমে একজনের মস্তিষ্কেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সাবেক ভূতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞান বিষয়ের একজন পরিচিত লেখক স্টারে ভারটান। তিনি বলছেন, করোনা মহামারিতে তাঁর একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করেছে নৃত্য।
মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে এ নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন স্টারে ভারটান। তাতে তিনি বলেন, শুধু শারীরিক উপকারিতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই যে বিশেষজ্ঞরা নাচের প্রশংসা করে থাকেন, বিষয়টি কিন্তু আসলে এমন নয়। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও নাচের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন যদি কেউ নাচেন, তাহলে তাঁর দুশ্চিন্তা দূর হয়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যথায় ভুগছেন, এমন মানুষের জন্যও এটি উপকারী। মস্তিষ্কের জটিল রোগ আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাপনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আলঝেইমার মস্তিষ্কের একধরনের অস্বাভাবিকতা, যাতে সাধারণত স্মৃতিভ্রংশ হয়।
স্টারে ভারটান বলছেন, একদিকে তখন করোনা মহামারি চলছিল, আর অন্যদিকে বাবা অসুস্থ। করোনাভাইরাস মহামারিকালে এই মানসিক চাপ সামলাতে তিনি প্রতিদিন নাচতেন। এতে তাঁর প্রাত্যহিক জীবনে দারুণ একটা প্রভাব পড়েছে। তাঁর মতো আরও অনেক বিশেষজ্ঞ নিয়মিত নাচার এসব উপকারিতার কথা বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়েটিভ আর্টস থেরাপি বিশেষজ্ঞ জ্যাকলিন বিয়োনদোও নৃত্যের স্বকীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, নৃত্য শরীরচর্চার স্বতন্ত্র মাধ্যম। যেমন সাইকেল চালানো শরীরচর্চার বড় মাধ্যম। কিন্তু সাইকেল চালানোর মতো শরীরচর্চার মাধ্যমগুলোর চেয়েও নাচ ভিন্ন।
বলা হচ্ছে, নৃত্য একজন মানুষকে স্বতন্ত্রভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দেয়। শুধু যাঁরা মানসিক অবসাদে ভুগছেন কিংবা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, এমন মানুষের ক্ষেত্রেই যে নাচের থেরাপি সাহায্য করে, এমনটা নয়। সিজোফ্রেনিয়ার মতো মস্তিষ্কের মারাত্মক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
জ্যাকলিন বিয়োনদো ২০২১ সালে এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। তাতে তিনি দেখতে পান, সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মধ্যে যাঁরা নাচের থেরাপি নিয়েছেন, তাঁরা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত অন্য রোগীর তুলনায় অলীক কিছুর অস্তিতে বিশ্বাস (হ্যালুসিনেশন) ও মস্তিষ্কের বিশেষ ধরনের বিকৃতিতে কম ভোগেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরে একা একা নাচা বেশ উপকারী। তবে অভিজ্ঞ একজন থেরাপিস্টের সঙ্গে নাচতে পারলে এ অভিজ্ঞতা আরও বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।