টিকা নিয়ে বেড়েছে ওজন, তৈরি হয়েছে অ্যান্টিবডি

ভারতে দেশীয় পদ্ধতিতে কোভ্যাক্সিন নামের টিকা তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক
ছবি: ভারত বায়োটেক

ভারতের জৈব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত করোনার টিকা কোভ্যাক্সিন নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর। এরপর তাঁর সাত কেজি ওজন বেড়ে গেছে। তবে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সহযোগিতায় পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) এবং হায়দরাবাদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক যৌথ গবেষণায় সম্ভাব্য টিকাটি উদ্ভাবন করেছে। এই টিকার মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি আজ মঙ্গলবার এক খবরে জানায়, ভারত বায়োটেক তাদের টিকাটি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ডিসিজিআইয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে। বিষয়টি ভারত বায়োটেক গতকাল সোমবারই নিশ্চিত করেছে। টিকাটি অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ভাবিত তিনটি টিকা মানবদেহে পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে টিকা পাওয়া যেতে পারে।

ভারতে এ নিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দিতে আবেদন জানাল। ভারত বায়োটেকের আগে দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার এ আবেদন করে। সেরাম ইনস্টিটিউট যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করবে।

ভারত বায়োটেকের টিকার মানবদেহে পরীক্ষা কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রথম অংশ নেন চিরঞ্জিত ধীবর। গত ২৯ জুলাই তিনি কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ নেন। এর ১৪ দিন পর ১২ আগস্ট নেন দ্বিতীয় ডোজ। গবেষকেরা বলেছেন, পাঁচ মাস ধরে চিরঞ্জিত সুস্থ আছেন। তাঁর শরীরে অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়েছে।

ভারত বায়োটেকের টিকাটি বর্তমানে মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। এই ধাপে ভারতের ১৮টি স্থানে প্রায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর টিকার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

টিকা পরীক্ষার সময় চিরঞ্জিতের ওজন ছিল ৬২ কেজি। এখন তাঁর ওজন ৬৯ কেজি। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ধীবর কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদনে সাড়া দেয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)। এরপর ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের প্রিভেনটিভ অ্যান্ড থেরাপিউটিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইউনিটে যোগ দেন তিনি। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর চিরঞ্জিত পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে নিজ বাড়িতে ফেরেন।

টিকা নেওয়ার পরের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে চিরঞ্জিত বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা ভয় ও দুর্বলতা ছিল। বমি বমি করত। দুই দিন জ্বরও ছিল। হয়েছিল কাশিও। এরপর তা কমে যায়। এখন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে যোগব্যায়াম করছেন। স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের পরামর্শে দুই ডোজ কোভ্যাক্সিন নেওয়ার ১০৪ দিন পর গত নভেম্বরে চিরঞ্জিতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তাঁর শরীরে যতটুকু দরকার, ততটুকু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। একটু ব্যায়াম করলে সুস্থই থাকবেন। তবে চিকিৎসকেরা তাঁকে ছয় মাস পর্যন্ত নেশাজাতীয় কিছু খেতে নিষেধ করেছেন। সঙ্গে প্রোটিন–জাতীয় সহজপাচ্য খাবার খেতে বলেছেন।

প্রথম দিকে কিছুটা ভয় ও দুর্বলতা ছিল। বমি বমি করত। দুই দিন জ্বরও ছিল। হয়েছিল কাশিও। এরপর তা কমে যায়। এখন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে যোগব্যায়াম করছেন। স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন।
চিরঞ্জিত ধীবর, টিকা গ্রহণকারী পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক

চিরঞ্জিত সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখন ভালোই আছেন। তবে টিকা নেওয়ার পর ওজন বেড়ে গেছে সাত কেজি। চিকিৎসকেরা তাঁকে বলেছেন, ওজন বাড়ায় দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

ভারত বায়োটেকের টিকাটি বর্তমানে মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। এই ধাপে ভারতের ১৮টি স্থানে প্রায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর টিকার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।