রাখাইনে আবার সহিংসতা ঘরবাড়িতে হামলা, আগুন

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের থান্ডয়ি শহরে গতকাল সোমবার বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ার সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি দলকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় আতঙ্কিত মুসলিম লোকজন নিজেদের বাড়িঘরে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনার এটাই ছিল সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ। ২০১২ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত ওই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতায় ২৩৭ জন নিহত ও দেড় লাখ মানুষ গৃহহীন হয়।

জাতিগত সহিংসতাকে মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের পথে একটি বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশটিতে কয়েক দশকের সামরিক শাসনের অবসানের পর সেনা-সমর্থিত একটি বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কার-উদ্যোগ হাতে নেয়। পুলিশ জানায়, থান্ডয়ির সহিংসতায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে থান্ডয়ির অবস্থান প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দূরে। রাখাইন রাজ্যের ওই এলাকায় আগেও মুসলামান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ কয়েক দফা সহিংসতার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একজন মুসলমান রাজনীতিক বলেন, একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গতকালের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল।

কামান মুসলিম পার্টির প্রধান কিয়াও জান লা বলেন, তাঁরা এখন আতঙ্কিত হয়ে বাড়িতে লুকিয়ে আছেন। মুসলমানদের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলায় প্রায় ২০০ লোক অংশ নেয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল মুখোশধারী। তারা মশাল নিয়ে হামলা চালায়।

মুসলিম পার্টির প্রধান জান লা আরও বলেন, তিনি তাঁর বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল রাখতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে নিষেধ করেছিলেন। গত শনিবার রাতের ওই ঘটনার পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে অবমাননা করেছেন। এর পরই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে জানানো হয়, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমান ও বৌদ্ধদের মধ্যে জাতিগত সহিংসতায় গত বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৯২ জন নিহত হয়। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে মিয়ানমার দাবি করে আসছে। অবশ্য ওই সম্প্রদায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করছে। জাতিসংঘের মতে, রোহিঙ্গাদের কার্যত  তেমন কোনো মিত্র নেই।

রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে ২০১২ সালের জুনে যে সহিংসতা শুরু হয়, তাতে মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যান্য গোষ্ঠীও (যেমন: কামান) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কামানরা নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে রোহিঙ্গাদের চেয়ে ভিন্ন। মিয়ানমারের মোট ছয় কোটি মানুষের প্রায় ৫ শতাংশ মুসলমান বলে ধারণা করা হয়। রয়টার্স।