স্টার্টআপে বিনিয়োগ বাড়লেও ১০০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ সেই তলানিতেই

দেশের স্টার্টআপগুলোতে ভালো বিনিয়োগ আসছে। এটিকে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এ খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে থাকা দেশের একটি বাংলাদেশ। স্টার্টআপ নিয়ে তৈরি করা বিশ্বের এক হাজার শহরের তালিকায় বাংলাদেশ থেকে স্থান পেয়েছে শুধু ঢাকা।  

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘স্টার্টআপ ব্লিঙ্ক’ সম্প্রতি ‘গ্লোবাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ইনডেক্স ২০২২’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১০০টি দেশ ও ১ হাজার শহরকে বিবেচনায় নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত বছরের মতো এবারও ৯৩ তম অবস্থান ধরে রেখেছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ১০০ দেশের তালিকায় জায়গা পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর মধ্যে ভারত ১৯, পাকিস্তান ৭৬ ও শ্রীলঙ্কা ৯০ তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, কানাডা, সুইডেন, জার্মানি ও সিঙ্গাপুর।

কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেলেও স্টার্টআপে নিজেদের গতি ধরে রেখেছে শ্রীলঙ্কা। আগের বছরের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে ১০০ দেশের মধ্যে ৯০ তম স্থানে এসেছে দেশটি। প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মানুষকে উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঠেলে দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে স্টার্টআপ ব্লিঙ্ক।

তালিকার ১ হাজার শহরের মধ্যে ভারতের বেঙ্গালুরু আছে অষ্টম স্থানে। তালিকায় আঞ্চলিকভাবে ভারতের শহরগুলোই রাজত্ব করছে। ঢাকা ৬৩ ধাপ পিছিয়ে ৩২৬ তম অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এ তালিকায় শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় শহরগুলো বিবেচনায় নিলে ঢাকার অবস্থান ১২ তম। অপরদিকে এ বছর ১ হাজার শহরের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে খুলনা ও চট্টগ্রাম।

এ নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই স্টার্টআপ হয়ে যায় না। আইডিয়াকে উন্নত ও লাভজনক করতে গবেষণার প্রয়োজন, যেটার অভাব আছে বাংলাদেশে।’

সরকারের আর্থিক সহায়তা পেলে বাংলাদেশে স্টার্টআপের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করেন এম রোকনুজ্জামান। বলেন, ‘কিন্তু কতগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারে, তা দেখতে হবে। মানুষের জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে, সমাজের চাহিদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে ধরনের আইডিয়া দরকার তার ওপর গবেষণা করতে হবে।’

স্টার্টআপ ব্লিঙ্ক বলেছে, বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় সমর্থন দরকার। ইন্টারনেট সেবায় স্থিতিশীলতাসহ অবকাঠামোগত উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারের নীতিগত সহায়তা, করপোরেট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও স্টার্টআপবান্ধব শিল্প–অ্যাকাডেমিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় স্টার্টআপে চার গুণ বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে, যার বেশির ভাগই এসেছে দেশের বাইরে থেকে। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য এটা বড় সুযোগ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশীয় গবেষণা সংস্থা লাইটক্যাসল পার্টনার্স বাংলাদেশ স্টার্টআপ নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ এসেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ২০১৬ সাল থেকে স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত তারা চারটি প্রতিষ্ঠানে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও আইডিএলসি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডের জেনারেল পার্টনার জাভেদ নূর প্রথম আলোকে বলেন, দেশীয় বিনিয়োগ যাঁরা করবেন তাঁদের স্টার্টআপ বিষয়টি বুঝতে হবে। দেশের অনেক মেধাবী তরুণ এখন উদ্যোক্তা হচ্ছেন।

জাভেদ নূর আরও বলেন, আইডিএলসি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে স্টার্টআপটি কোন সমস্যা নিয়ে কাজ করছে এবং তা কত বড়, উদ্যোক্তা কারা, ব্যবসায়িক প্রতিশ্রুতি, সক্ষমতা, উৎসাহ ও টিমসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নেয়। আরও দেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক পদ্ধতি সহজ হলে স্টার্টআপ অনেক এগিয়ে যাবে।