বর্ণবাদবিরোধী নেতা টুটুকে স্মরণ করছে বিশ্ব

কেপটাউন সিটি হলে বেগুনি রঙের আলো জ্বালিয়ে টুটুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
ছবি: রয়টার্স

বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটুর মৃত্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সদ্য প্রয়াত এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক সপ্তাহের কর্মসূচি পালন করছে দেশটি। বিশ্বনেতারাও শান্তিতে নোবেলজয়ী টুটুর মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।

গতকাল রোববার শান্তিতে নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু মারা যান। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এ নেতার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। প্রস্টেট ক্যানসার এবং সংক্রমণের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর কেপটাউনে তাঁর মৃত্যু হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আগামী ১ জানুয়ারি কেপটাউনে ডেসমন্ড টুটুর রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুদিন রাষ্ট্রীয় ভবনে তাঁর মরদেহ রাখা হবে।

গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বস্তরের মানুষ কেপটাউনের সেন্ট জর্জ’স ক্যাথেড্রালে ফুল দিয়ে জাতীয় এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ব্রেন্ট গোলিয়াথ নামের একজন সে সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘একজন অ্যাংলিকান হিসেবে সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে তিনি যে অবদান রেখেছেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর আমি খুব শোকাহত হয়ে পড়ি। তাঁকে আমাদের জন্য পাঠিয়েছিলেন বলে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

সোয়ে মোলিয়েমা নামের একজন আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আর্চবিশপের বিদায়ে আমরা অনেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েছি। এমনকি যাঁরা রাজনৈতিকভাবে সব সময় তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করতেন না, তাঁরাও প্রবীণ এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।’

এদিকে এক বিবৃতিতে বৈষম্যমুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা গড়তে ডেসমন্ড টুটুর ভূমিকার কথা স্মরণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারাও টুটুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

টুটুকে ঈশ্বর ও জনগণের সত্যিকারের সেবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন বয়সীদের হৃদয়ে ডেসমন্ড টুটু বেঁচে থাকবেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সদ্য প্রয়াত এ নেতাকে ‘পরামর্শদাতা, বন্ধু ও নৈতিক আদর্শ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

এক শোকবার্তায় ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ডেসমন্ড টুটুর সঙ্গে তাঁর অতীতের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, বৈঠকে খুব আন্তরিক থাকতেন এ নেতা। হাস্যরসও করতেন তিনি।

বিবৃতিতে রানি এলিজাবেথ আরও লিখেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ আর্চবিশপ টুটুর শূন্যতা অনুভব করবেন। যুক্তরাজ্য, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর অনেক মানুষেরই একই রকম অনুভূতি। এসব জায়গায় তাঁকে অনেক ভালোবাসা ও সম্মানের চোখে দেখা হয়।’

পোপ ফ্রান্সিস এক বিবৃতিতে ডেসমন্ড টুটুর পরিবার ও তাঁর প্রিয়জনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।

দ্য নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও ডেসমন্ড টুটুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্যমুক্ত মানবসমাজ গড়ার গভীর চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন তিনি (টুটু)। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ, একজন চিন্তাবিদ, একজন নেতা, একজন যাজক।

ডেসমন্ড টুটু ১৯৩১ সালে ট্রান্সভাল সোনার খনির শহর ক্লার্কসডর্পে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জাকারায়া ছিলেন শিক্ষক এবং মা আলেটা ছিলেন গৃহিণী। তিনি প্রাথমিকভাবে তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জন্য স্কুলে পড়ালেখার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। টুটু বিশপ ট্রেভর হাডলস্টন এবং অন্য বর্ণবাদবিরোধী শ্বেতাঙ্গ পাদরিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে একজন গির্জার যাজক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাংলিকান ডিন নির্বাচিত হন। ম্যান্ডেলা কারাগারে থাকাকালে তাঁর আন্দোলন এগিয়ে নেন টুটুসহ অন্যরা।