একদিনেই গজনি ও হেরাত শহরের দখল নিল তালেবান

তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে আপগানেরা ছুটছে রাজধানী কাবুলের দিকে।
ছবি: এএফপি।

আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে একের পর এক শহরের পতন ঘটছে। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনে গজনি ও হেরাত শহরের দখল নিয়েছে তারেবান। হেরাত আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। খবর আল জাজিরা ও বিবিসির।

এ নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১১টি প্রাদেশিক রাজধানী সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে গেল। স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকদের বরাতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত প্রদেশের রাজধানী ঐতিহাসিক শহর হেরাত। বৃহস্পতিবার শহরটি তালেবান যোদ্ধারা দখলে নিয়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান নিয়েছে তালেবান।

একই দিন আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনি শহর দখলে নেয় তালেবান। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে শহরটির অবস্থান। কৌশলগত কারণে গজনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শহরটি কাবুল-কান্দাহার মহাসড়কসংলগ্ন অবস্থিত। কাবুলের সঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ এই সড়কপথ দিয়েই হয়ে থাকে।

গজনির প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রধান নাসির আহমেদ ফকিরি বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। তার মধ্যে গভর্নরের কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও কারাগার রয়েছে। গজনির বিভিন্ন অংশে এখনো আফগান সেনাদের সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে। তবে শহরের বেশির ভাগ এলাকাই তালেবানের দখলে চলে গেছে।

এর আগে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বাদাখসান প্রদেশের রাজধানী ফাইজাবাদের দখল নেয় তালেবান। হেরাত, গজনি ও ফাইজাবাদ ছাড়াও ফারাহ, পুল-ই-খুমরি, জারাঞ্জ, কুন্দুজ, তাকহার, সার-ই-পল, তালুকান ও সেবারঘান দখল করেছে তালেবান।

হেরাত, গজনি ও ফাইজাবাদের পতনের কারণে প্রচণ্ড চাপে রয়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চলের বড় শহর মাজার-ই-শরিফ। তালেবান যোদ্ধারা শহরটির কাছাকাছি চলে এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মাজার-ই-শরিফ সফর করেন। শহরটি রক্ষায় তিনি সেখানকার তালেবানবিরোধী যোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। এছাড়া কাবুলের পর আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার এবং হেলমান্দ শহরে তালেবানের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে আফগানিস্তানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া তালেবান। লক্ষ্য অর্জনে সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে তালেবান তাদের অভিযান জোরদার করেছে।

তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে যেকোনো সময় রাজধানী কাবুলের পতন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, কাবুলকে তালেবান ৩০ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। ৯০ দিনের মধ্যে তালেবানের হাতে পতন ঘটতে পারে কাবুলের।

আরও পড়ুন

এদিকে কাবুলের মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে টুইটার বার্তায় বলা হয়েছে, আটক কিংবা আত্মসমর্পণ করা সরকারি সেনাদের হত্যা করছে তালেবান। এটা খুবই উদ্বেগজনক। যুদ্ধাপরাধের সামিল।

তালেবান ও আফগান সরকারি বাহিনীর সংঘাতে মারা পড়ছেন বেসামরিক মানুষও। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যমতে, গত এক মাসের সংঘাতে দেশটিতে ১ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে লাখো মানুষ দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাবুলে এসে জড়ো হয়েছে। এর মধ্যে ৭২ হাজার শিশুও রয়েছে। তাঁরা কাবুলের সড়কে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন