এক আফগান দোভাষীর আকুতি

কান্দাহার শহরে কানাডিয়ান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন এক দোভাষী। কান্দাহার শহর, ২০০৯
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সাবেক এক আফগান দোভাষী নিজেকেসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন। আফগান রিলোকেশনস অ্যান্ড অ্যাসিসট্যান্স পলিসির (এআরএপি) অধীনে গত সপ্তাহে আহমেদ (ছদ্মনাম) যুক্তরাজ্যে আসার চূড়ান্ত অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিন সকালেই তালেবান পুরো কাবুলের দখল নিয়ে নেয়। দ্রুতই পাল্টে যায় দৃশ্যপট।

আহমেদ বিবিসিকে বলেন, তিনি, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে আটকা পড়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘কাবুলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনও শেষ হয়ে গেছে। আমাদের এক অন্ধকার  ঘরে ঠেলে দেওয়া হলো।’

কাবুল দখল করার পর গত মঙ্গলবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ঘোষণা দিয়ে বলেন, দেশে পশ্চিমা–সমর্থিত সরকারের সদস্য ও আফগান বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কেউ আপনার ক্ষতি করবে না। কেউ আপনার দরজায় কড়া নাড়বে না।’

কিন্তু তালেবানের এ কথায় কোনো আস্থা নেই আহমেদের। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আপনি জানেন, তালেবান বিশ্বাসযোগ্য নয়...তারা যদি আমাকে খুঁজে পায়, কোনো ক্ষমা করবে না। আমি ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য, ভাইয়ের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অনেক টহল ও মিশনে কাজ করেছি। তারা আমাকে চেনে। আমার জন্য বের হওয়া একটা বড় হুমকি। এখানে কোনো ক্ষমা হবে না, আমাকে হত্যা করা হবে।’

আহমেদ বলেন, যুদ্ধ চলাকালেও তালেবানের টার্গেট ছিল দোভাষীরা। কারণ, তাঁরা ছিল বিদেশি বাহিনীর ‘চোখ-কান’।

আহমেদ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে কিছু বলতে চান কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি শুধু আমার ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য একটি উপায় চাচ্ছি তাঁর কাছে। আমি তাঁর (জনসন) কাছে আকুতি জানাচ্ছি।’

আমি ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য, ভাইয়ের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অনেক টহল ও মিশনে কাজ করেছি। তারা আমাকে চেনে। আমার জন্য বের হওয়া একটা বড় হুমকি। এখানে কোনো ক্ষমা হবে না, আমাকে হত্যা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা বাড়িয়েছে তালেবান। এরপর থেকে ঝুঁকির মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের অনেক নাগরিক। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের জন্য কিছু করছে না ব্রিটিশ সরকার—এমন সমালোচনা শুরু হয়েছিল।

মিশন শুরুর আগে গাম্বেরি ঘাঁটিতে এক আফগান দোভাষীর সঙ্গে হাঁটছেন এক মার্কিন সেনা। লাগমান প্রদেশ, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা এ নিয়ে সমালোচনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল ঘোষণা দেন, ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন—এমন ৫০০ আফগান ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ৫০০ আফগান কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এই আড়াই হাজার আফগানকে যত দ্রুত সম্ভব যুক্তরাজ্যে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুই মন্ত্রী।

এ ছাড়া ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের সরকার সাহায্য করছে না—গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন বেন ওয়ালেস ও প্রীতি প্যাটেল।