টিকার চাহিদা পূরণে মরিয়া ভারত কী করছে

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া স্বজনের শেষকৃত্যে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এই ব্যক্তি
ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত ভারতে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতে এখন পর্যন্ত যত নাগরিককে টিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম। মহামারি থেকে রক্ষায় প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের এই দেশের জনগণের একটি বড় অংশকে টিকার আওতায় আনতে হবে।

ভারতে গত তিন–চার দিনেই ১০ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১, যা এক দিনে একক কোনো দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ কোটি ৭০ লাখের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯২ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ভারতের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও টিকা তৈরির কাঁচামাল দিচ্ছে তারা। কারও কারও সহায়তা ইতিমধ্যে বিমানযোগে পৌঁছেও গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিচ্ছে

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদনকারী সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) কী কী কাঁচামাল দরকার, সে বিষয়ে অবগত হয়েছেন তাঁরা। এগুলো দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাঁরা।

গত মার্চে কোভিশিল্ডের রপ্তানিতে লাগাম টেনেছে ভারত সরকার। বিভিন্ন দেশকে অনুদান হিসেবে স্বল্পসংখ্যক টিকা প্রদান এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহে গঠিত বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের আওতায় কিছু টিকা প্রদান চালু রেখেছে তারা।

ভারতের বৃহত্তম টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউটই আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রাপ্তিতে সংকটের কথা জানিয়েছিল। সেরামের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি কাঁচামাল সরবরাহে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেল কালচার মিডিয়া, বিশেষ ধরনের টিউব ও রাসায়নিক আমদানিতে সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছিল সেরাম ইনস্টিটিউট। তবে সম্প্রতি ভারতীয় একটি চ্যানেলকে আদর পুনেওয়ালা বলেছিলেন, তাঁরা কোভিশিল্ড উৎপাদন নিয়ে সংকটের সমাধান করেছেন। তবে তাঁরা আরেকটি টিকা উৎপাদনের কাঁচামাল নিয়ে সমস্যায় আছেন। সেটি হলো ‘কোভোভ্যাক্স’। মার্কিন টিকা উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্স এই টিকা উদ্ভাবন করেছে।

ভারতে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘বায়োলজিক্যাল ই’–এর সক্ষমতা বাড়াতেও অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলেছে, ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত অন্তত ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে কোম্পানিটিকে সহায়তা করবে।

টিকা উৎপাদন বাড়াতে যা করছে ভারত

ভারতের প্রধান দুই টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেককে (কোভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী) যথাক্রমে ৪০ কোটি ও ২১ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটির সরকার। এ ছাড়া গত মার্চে কোভিশিল্ডের রপ্তানিতে লাগাম টেনেছে ভারত সরকার। বিভিন্ন দেশকে অনুদান হিসেবে স্বল্পসংখ্যক টিকা প্রদান এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহে গঠিত বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের আওতায় কিছু টিকা প্রদান চালু রেখেছে তারা।

ফাইল ছবি

ভারত সরকার বিদেশ থেকে ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তবে এসব টিকা উৎপাদকদের কোনোটিই এখনো ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেনি।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক–ভি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পাঁচটি কোম্পানি বছরে এই টিকার ৮৫ কোটি ডোজ তৈরি করবে। এসব টিকা ভারতের বাজার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি হবে। তবে এখনো দেশটিতে রাশিয়ার এই টিকা উৎপাদন শুরু হয়নি।

টিকা উৎপাদন পরিস্থিতি

ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে টিকা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কিছুদিন ধরে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট। গত জানুয়ারিতে কোম্পানিটি জানায়, তারা মাসে ছয় কোটি থেকে সাত কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করছে। এর মধ্যে কোভিশিল্ড ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত কোভোভ্যাক্স টিকা রয়েছে। তবে ভারতে এখনো কোভোভ্যাক্স’ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
সেরাম মার্চ থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে ১০ কোটি ডোজে উন্নীতের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে তারা এই সময়সীমা বাড়িয়ে জুন নির্ধারণ করেছে।

রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক–ভি টিকা। এই টিকা ভারতে উৎপাদন করা হবে
ফাইল ছবি: রয়টার্স


গত বছর সেরাম ইনস্টিটিউট বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সকে প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি ডোজ টিকা দিতে রাজি হয়েছিল। ১০ কোটি ডোজ করে কোভিশিল্ড ও কোভোভ্যাক্স দিতে চেয়েছিল তারা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ সরবরাহের কথা ছিল তাদের। তবে ভারত সরকারের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত মাত্র তিন কোটি ডোজ সরবরাহ করেছে তারা। তার মধ্যে ১ কোটি ডোজ ভারতেই রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া সেরাম ইনস্টিটিউট ৯৯ কোটি ডোজের বেশি কোভিশিল্ড টিকা এবং নোভাভ্যাক্স সাড়ে ১৪ কোটি ডোজ সরবরাহে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছিল।