আফগানিস্তানে একের পর একে শহর ও অঞ্চল দখল করে দেশটির একেবারে কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তালেবানের অগ্রযাত্রা। সংগঠনটির যোদ্ধারা গজনি শহর ঘিরে ফেলেছেন। আফগান কর্মকর্তারা আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সেনাদের সঙ্গে লড়াই করতে এখন শহরটিতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন তাঁরা। শহরটি তাঁদের হাতে পতনের হুমকিতে রয়েছে। খবর রয়টার্স ও এএফপি।
গজনির প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য হাসান রেজায়ি বলেন, গজনির পরিস্থিতি খুবই জটিল...। তালেবান যোদ্ধারা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আত্মগোপন করে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর (এএনডিএসএফ) সদস্যদের সঙ্গে লড়াই করছেন। এতে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করা সেনাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনাকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে দেশটিতে সরকারি সেনা ও তালেবানের মধ্যে লড়াই বেড়ে গেছে। আফগানিস্তানে ২০ বছরের আগ্রাসন শেষে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন সেনাদের দেশটি ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে তালেবানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
গজনি ছাড়াও আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ কান্দাহারে সেনাদের সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।
এদিকে আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মার্কিন জেনারেল অস্টিন মিলার আজ তাঁর দায়িত্বভার আনুষ্ঠানিকভাবে ত্যাগ করেছেন। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিশনের পরিসমাপ্তি ঘটার একটি প্রতীক এটি।
তালেবানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মার্কিন সেনাদের পুরোপুরিভাবে প্রত্যাহারের চূড়ান্ত প্রস্তুতি, আফগান সেনা ও তালেবানের মধ্যে ঘোর লড়াই এবং এরই ধারাবাহিকতায় তালেবানের অগ্রযাত্রা—এসবের মধ্যেই কাতারের রাজধানীতে চলছে আফগান সরকার-তালেবান শান্তি আলোচনা। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে সামান্যই।
গজনি ছাড়াও আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কান্দাহারে সেনাদের সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। প্রদেশটি আগে থেকেই তালেবানের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। রাজধানী কাবুল ও কান্দাহার শহরের মধ্যকার প্রধান সড়কটি গজনির ওপর দিয়ে গেছে।
আফগানিস্তানের পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য হামিদজাই লেলে বলেন, চার দিন ধরে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা পশ্চিম থেকে কান্দাহার শহরে আক্রমণ চালাচ্ছেন। আফগান সেনাবাহিনী, বিশেষ বাহিনীগুলো তাঁদের সঙ্গে লড়াই করছে। তালেবান যোদ্ধাদের পিছু হটানোর চেষ্টা করছে তারা।
আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মার্কিন জেনারেল অস্টিন মিলার গতকাল তাঁর দায়িত্ব ত্যাগ করেছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান দাবি করেছেন, কান্দাহার পরিস্থিতি নিরাপত্তা বাহিনীর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানের পাশাপাশি বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।
গত সপ্তাহে পশ্চিমাঞ্চলীয় বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নাউ নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান।
আফগান সরকারের দাবি, সেনারা তালেবানের অগ্রযাত্রা রুখতে সক্ষম হচ্ছে। তবে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। তালেবানের বিপক্ষে লড়তে আফগান বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। তালেবানের তাড়া খেয়ে দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানে সহস্রাধিক সেনার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পশ্চিমা দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তানে এ মুহূর্তে শতাধিক জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান। যদিও তালেবান বলছে, ৩৪টি প্রদেশের ২০০ জেলা তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে অধিকাংশ প্রধান প্রধান শহর ও প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ এখনো সরকারের হাতে।