দাড়ি–টুপি না থাকায় কাজে বাধা

আফগানিস্তানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সামনে টহল বাড়িয়েছে তালেবান
ফাইল ছবি : রয়টার্স

আফগানিস্তানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সামনে টহল বাড়িয়েছে তালেবান। এই নিরাপত্তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে আসা কর্মীদের দাড়ি বা মাথায় টুপি আছে কি না এবং নিয়ম মেনে পোশাক পরেছেন কি না, তা দেখা।

আজ সোমবার থেকে এই কাজ শুরু করেছে দেশটির নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারি দপ্তরে পুরুষ কর্মীদের ওপর তালেবান প্রশাসন এই বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিয়েছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে।

তিন সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে তারা তাদের নাম প্রকাশ করতে চাইছে না। সূত্রগুলো জানিয়েছে, আফগানিস্তানের নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (প্রোপাগেশন অব ভার্চু অ্যান্ড প্রিভেনশন অব ভাইস) প্রতিনিধিরা গতকাল দেশটির সব সরকারি দপ্তরের প্রধান ফটকে পাহারা দিয়েছেন এবং নজর রেখেছেন কর্মীরা নতুন নিয়ম ঠিকঠাকমতো অনুসরণ করছেন কি না।

আফগান সরকারের নতুন নিয়মে সরকারি কর্মীদের দাড়ি না কামাতে, ঢিলেঢালা আফগানি লম্বা কোর্তা ও পায়জামা পরতে এবং মাথায় ‍টুপি বা পাগড়ি বাঁধার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দপ্তরগুলোকে যথাসময়ে সব কর্মীর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই আফগান কর্মকর্তা বলেছেন, যদি নির্দিষ্ট পোশাক না পরে অফিসে আসেন, তাহলে কর্মীরা কার্যালয়ে ঢুকতে পারবেন না, এমনকি তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

এর আগে একই মন্ত্রণালয় থেকে নারীদের পুরুষ সঙ্গী ছাড়া সব ধরনের বিমানভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বুধবার মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা স্কুল খুলে দিতে সরকারকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেবেন তাঁরা।

এমনকি দেশটিতে এখন নারী-পুরুষ একসঙ্গে পার্কে যেতে পারবেন না। গত রোববার থেকে নারী–পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা সময়ে পার্কে যাওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। নারীরা সপ্তাহে তিন দিন এবং পুরুষেরা সপ্তাহে চার দিন পার্কে যেতে পারবেন। দম্পতি বা একই পরিবারের সদস্য হলেও এই নিয়ম পালন করতে হবে। অথচ গত বছরের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর তালেবান বলেছিল, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে আগের শাসনের তুলনায় এবার পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না, বরং সেই ১৯৯৬ সাল পুনরায় ফিরে আসছে। তালেবান প্রথম মেয়াদে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং দেশেটির ওপর নতুন করে নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দেশটির সাধারণ জনগণ আবারও চরম মানবিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।