পতনের মুখে নেপালের নতুন সরকার?

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা

গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির পর ক্ষমতায় বসা নেপালের চার মাস বয়সী সরকার অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সরকারের জোটসঙ্গী মাওবাদীরা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। সমতলের মদেশীয়দের বিক্ষোভ চলছেই। এ অবস্থায় পার্লামেন্টে বড় দল নেপালি কংগ্রেসও সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা নিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। খবর রয়টার্সের।
কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের (সংযুক্ত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) নেতা অলি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দক্ষিণের সমতলের মদেশীয়দের চলতে থাকা সহিংস বিক্ষোভ প্রশমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সীমান্তে ভারতীয় অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়েও অলি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তবে হিমালয়ের দেশটিতে গত বছরের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া মদেশীয় বিক্ষোভ এখনো চলছে। গত মাসেই পুলিশের গুলিতে মারা গেছে তিনজন বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছে।
শক্ত হাতে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের সরকারি প্রচেষ্টায় বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, সরকার যে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নয়, এই আচরণ সেই ইঙ্গিত দেয়। একদিকে মদেশীয়দের বিক্ষোভ, অন্যদিকে সীমান্তে পণ্য পরিবহনে বাধায় নেপালজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংকট লেগেই আছে। জ্বালানি ও গ্যাসের জন্য রাজধানী কাঠমান্ডুতে মানুষের দীর্ঘ সারি এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এখানে ব্যর্থ হলে কালোবাজারে চড়া মূল্যে এসব সামগ্রী কিনতে বাধ্য হয় নগরবাসী।
অলির সরকারের শরিক মাওবাদী দলের মুখপাত্র দীননাথ শর্মা বলেন, ‘সরকারের ভেতরে দুর্নীতি বাড়ছে—এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।’
অলির মন্ত্রিসভায় ছয়জন উপপ্রধানমন্ত্রী আছেন। এঁদের মধ্যে একজন বিলুপ্ত রাজতন্ত্রের প্রতি গভীর অনুরক্ত। আরেকজন মদেশীয় দলের নেতা এখনো সংবিধানে স্বাক্ষরই করেননি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় ভারত এতে বাধা সৃষ্টি করলে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, সীমান্তে অবরোধের পর এখন সম্পর্ক ভালো হলেও অলির বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা ভারতকে ক্ষুব্ধ করেছে। ভারত মদেশীয়দের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে মদেশীয় আন্দোলনের নেতা বিজয় কে কর্ণ বলেন, ‘নেপালের ক্ষমতাসীন শ্রেণির উপনিবেশ মদেশ। আমরা বর্ণবাদের শিকার।’ সাংবিধানিক সংকট মেটাতে প্রধানমন্ত্রী অলিকে ‘প্রধান সমস্যা’ বলে চিহ্নিত করেন কর্ণ।
সবকিছু মিলিয়ে অলির সরকারের পতনের সময় কাছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। আগামী বসন্তেই সরকারের পতন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অলির উপদেষ্টা বিষ্ণু রিমাল সরকার শিগগিরই কোনো সংকটে পড়বে বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘সরকার শিগগিরই পতনের কোনো আশঙ্কা নেই। আবার নতুন কেউ সরকার গঠন করবে, এমন সম্ভাবনাও দেখছি না।’
শীতের পরপরই নতুন করে আন্দোলন শুরুর জন্য চাপে রয়েছে মদেশীয় নেতৃত্ব। বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেসের গতিবিধির ওপর তাদের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। মার্চ মাসে নেপালি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন করবে। দক্ষিণাঞ্চলের এক কংগ্রেস নেতা বলেছেন, সভাপতি নির্বাচনের পরই তাঁরা ঠিক করবেন তাঁরা এখনকার জাতীয় ঐক্যের সরকারে যোগ দেবে, না অলিকে সরিয়ে নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করবেন। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, বর্তমানের ‘অতি জাতীয়তাবাদী’ সরকার এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সমঝোতার জন্য কংগ্রেসই যোগ্য দল।