বিক্রমাসিংহেকে মেনে নিচ্ছে না বিরোধীরা, বিক্ষোভ অব্যাহত
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গতকাল শুক্রবার ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাচ্ছে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তা ছাড়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতেও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগসহ একগুচ্ছ দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাতে দেশের শাসনব্যবস্থা আমূল বদলে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংসদে মাত্র একটি আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা বিক্রমাসিংহের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সমাজি জনা বালাভেগায়া (এসজেবি)। দলটির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ মাদ্দুমা বানদারা গতকাল বলেন, ‘সরকার গঠনের কোনো ম্যান্ডেট রনিল বিক্রমাসিংহের নেই। আমরা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, পার্লামেন্টে ১১৩টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করুন।’
পার্লামেন্টে নতুন সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য সংসদ সদস্যদের অর্থ দিয়ে কেনার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে এসজেবির নেতা ও সংসদ সদস্য রাজিথা সেনারত্নে গতকাল বলেন, রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে অর্থ দিতে চাওয়া হয়েছিল।
দেশটির আরেক বিরোধী দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টিও (এসএলএফপি) সরকারে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই দলের নেতা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি গতকাল বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সরকারে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কার আরও ১০টি রাজনৈতিক দল।
এসজেবির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ মাদ্দুমা বানদারা বলেন, কেবল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) নেতারা নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন। আগামী সপ্তাহে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। এই প্রস্তাব পাস হলে রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপাতত সরকারের বিরোধিতা না করার ঘোষণা দিয়েছে ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টির নেতা উইমাল বিরাসেনা। তবে তিনিও রনিল বিক্রমাসিংহের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গতকাল ১০ রাজনৈতিক দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে উইমাল বিরাসেনা বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতির এই বিপর্যয় সামাল দিয়ে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন না। দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার জন্য বিক্রমাসিংহেকেও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রনিল বিক্রমাসিংহের নিয়োগকে মাহিন্দা রাজাপক্ষের নিয়োগের সঙ্গে তুলনা করেছেন বামপন্থী দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার নেতা অরুনা কুমারা দিসানায়েক। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা যেভাবে পেছনের দরজা দিয়ে মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, ঠিক একইভাবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ক্ষমতায় বসালেন। সরকার তাঁর ম্যান্ডেটের বিপরীতে গিয়ে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করেছে।
শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবি
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোর গল ফেস গ্রিনে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ওই বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তোলা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গোতাবায়ার নেতৃত্বাধীন সরকারকে শিগগিরই পদত্যাগ করতে হবে এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকার ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমাতে হবে।
বিক্ষোভকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: যাঁরা নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে বসেছেন এবং সরকার চালানোর জন্য যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তাঁদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। হিসাববহির্ভূত সম্পদ জব্দ করবে সরকার। জনগণ ও পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারতের সংবিধানে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেই অধিকার শ্রীলঙ্কার সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজনের দাবিও জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
কলম্বোয় গতকাল বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন অধিকারকর্মী চামিরা দেদুবাজে। তিনি বলেন, বিক্ষোভের ৩৬তম দিনে এসে বিক্ষোভকারীরা এই দাবিগুলোর তালিকা করেছেন। এগুলো পার্লামেন্টে পাঠানো হবে।
ভারতীয় দূতের সঙ্গে প্রথম বৈঠক বিক্রমাসিংহের
রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল প্রথম বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর ভারতীয় হাইকমিশনের এক টুইট বার্তায় বলা হয়, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। পরে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের রাষ্ট্রদূতেরা দেখা করতে এলে তাঁদের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি এবং সংকট থেকে উত্তরণ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গেও গতকাল কথা বলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলি চালানোর যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হবে। তবে যদি দাঙ্গা বাধে, সে ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা আবার দেওয়া হবে।