মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে আসিয়ানের পাঁচ দফায় সমর্থন রাশিয়ার

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট শান্তিপূর্ণ উপায়ে এড়াতে পাঁচ দফার প্রস্তাব এগিয়ে নিচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। জোটের এমন উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে রাশিয়ার। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আসিয়ানের পাঁচ দফার কূটনৈতিক উদ্যোগ ভিত্তি হওয়া উচিত।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা সফরকালে অনলাইন সংবাদ সম্মেলন মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আজ মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ এমন মন্তব্য করেছেন। এ সময় ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি তাঁর পাশে ছিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এ সময় লাভরভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে আমরা (ক্রেমলিন) আসিয়ানের পাঁচ দফার ভিত্তিতে চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের গুরুত্বের কথা বলেছি। মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে এটাই রাশিয়ার স্পষ্ট অবস্থান।’

আরও পড়ুন

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো নতুন করে অবরোধ আরোপ করেছে। তাদের অভিযোগ, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা। নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে রাশিয়া মিয়ানমারের ওপর কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি ফেরাতে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের পাঁচ দফার উদ্যোগে সমর্থন জানাল রাশিয়া।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, আসিয়ানের পাঁচ দফায় চলমান সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ করা এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণে ফলপ্রসূ আলোচনায় জোর দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দরকার।

আরও পড়ুন

গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয় অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ওই নির্বাচনকে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ বললেও জনতার রায় মানেনি দেশটির সেনাবাহিনী। ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয় জান্তা। আটক হন সু চিসহ মিয়ানমারের প্রভাবশালী গণতন্ত্রকামী নেতারা। ঘুষ নেওয়া, তথ্য গোপন আইন ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগে সু চির বিচার চলছে।

তবে মিয়ানমারের জনতা সেনা অভ্যুত্থান মেনে নেয়নি। সু চির মুক্তি ও সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে কয়েক মাস ধরে উত্তাল রয়েছে মিয়ানমারের রাজপথ। চলছে বিক্ষোভ। সঙ্গে সেনাদের দমন-পীড়ন। এখন পর্যন্ত সেনা-পুলিশের গুলিতে মিয়ানমারে সাড়ে আট শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। আটক হয়েছেন সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার মানুষ। জান্তার শাসন হটাতে মিয়ানমারে ‘ছায়া সরকার’ গঠন করেছেন ক্ষমতাচ্যুত রাজনীতিকেরা।

আরও পড়ুন

দেশটিতে চলমান রক্তপাত বন্ধে এগিয়ে আসে আসিয়ান। গত এপ্রিলে জাকার্তায় বৈঠকে বসেন জোটের নেতারা। অভ্যুত্থানের পর প্রথম বিদেশ সফরে গিয়ে বৈঠকে অংশ নেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। এ সম্মেলনে জান্তাপ্রধানের প্রতি মিয়ানমারে হত্যা, নৃশংসতা ও রক্তপাত অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান আসিয়ান জোটের নেতারা। মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে পাঁচ দফার প্রস্তাব সামনে আনে আসিয়ান।
তবে আসিয়ানের এসব প্রস্তাবের দৃশ্যমান কোনো বাস্তবায়ন এখনো দেখা যায়নি। মিয়ানমারের রাজপথে বন্ধ হয়নি প্রাণহানি। নতুন করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে মিয়ানমার। এর মধ্যে গত মাসে নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে মস্কো সফর করে এসেছেন মিন অং হ্লাইং।

আরও পড়ুন