মিয়ানমারের একটি অঞ্চলে জান্তা সরকারবিরোধীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এই অবস্থার মধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিন রাজ্যের থান্টলাং শহরে কয়েক দিন ধরে স্থানীয় মিলিশিয়া ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। সেনা-মিলিশিয়া সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। সেনাদের গুলিতে শহরটিতে একজন খ্রিষ্টান যাজকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ওই সময় তিনি যে ভবনে অবস্থান করছিলেন, সেটায় আগুন দেওয়া হয়। জ্বলন্ত ভবনটি থেকে বের হওয়ার পরপরই ওই যাজককে গুলি করে সেনারা।
গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে স্থানীয় থান্টলাং শহরে অন্তত ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
গুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে থান্টলাংয়ের বাসিন্দারা। প্রাণ ভয়ে তাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ছুটছে। স্থানীয় বাস্তুচ্যুতদের সহায়তা করে থান্টলাং প্লেসমেন্ট অ্যাফেয়ার্স কমিটি নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের মুখপাত্র সালাই লিয়ান বিবিসিকে বলেন, ‘শহরে সেনারা নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে। বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে প্রাণ বাঁচাতে শহরবাসী বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে শুরু করেছে।’
স্থানীয় একজন বাসিন্দা সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাওকে বলেন, ‘থান্টলাং শহরের বাসিন্দাদের সবাই উদ্বাস্তু হয়েছে। শুধু সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সেনারা শহরে অবস্থান করছেন।’
মিয়ানমারের শিন রাজ্যের পাশেই ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম। ভারতীয় এ রাজ্যের নাগরিক সমাজের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে মিজোরামের দুটো জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি থমাস অ্যান্ড্রু বলেন, ‘থান্টলাং শহরটি নরকে পরিণত হয়েছে।’
রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে চলছে বিক্ষোভ–সংঘাত ও সেনাবাহিনীর দমন–পীড়ন।
জান্তার দমন–পীড়নে দেশটিতে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে অধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স। দেশটিতে জান্তার হাতে আটক হয়েছেন শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ ছয় হাজারের বেশি নারী ও পুরুষ।
অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। তবে গত আগস্টে নিজেকে মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন মিন অং হ্লাইং। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে সেনাশাসনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সেনা অভ্যুত্থান–পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি সামনে রেখে গত জুন মাসে ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো–অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে জানায়, সেনা অভ্যুত্থানের পরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মুখে মিয়ানমারে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।