মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো গড়ে তোলা হয়েছিল দেশটির প্রাচীন রাজ-রাজড়াদের বিলাসী জীবনের দিকে খেয়াল রেখে। সেটার প্রতিফলন নেপিডো নামটিতেও। যার অর্থ রাজাদের ঘরবাড়ি। শিল্পীর ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে ওঠা ছবির মতো সুন্দর এ শহরের ৮৪০ একর জায়গাজুড়ে পার্লামেন্ট ভবন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদকে পাশ কাটিয়ে সর্পিল গতিতে চলে গেছে ২০ লেনের মহাসড়ক।
গত সোমবার এ শহরেই শপথ নিলেন মিয়ানমারের নতুন গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা। বহু বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সাফল্য পেয়ে এবারই প্রথম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছেন গণতন্ত্রকামী আইনপ্রণেতারা। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের থাকার যে জায়গা মিলেছে, তা সুখকর নয়।
খিন মং সো এমনই একজন জনপ্রতিনিধি। থাকার স্থান নিয়ে নতুন এই এমপির কথা, ‘পার্লামেন্ট সদস্য হয়েও আমাদের জীবন একজন কলেজছাত্রের মতোই। ছোট হোস্টেলে থাকি আর দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করি।’
মং যেখানে বসে এ কথা বলছিলেন, সেটি ছিল পাতলা ফোমের ম্যাট্রেস বসানো একটি বিছানা। পাশে সারিবদ্ধভাবে পাতা এ রকমই আরও কয়েকটি বিছানা। ম্যাট্রেসের ওপর বিছানো পুরোনো ডিজনি চলচ্চিত্র কারস (গাড়ি)-এর ছবিসংবলিত ছাপা চাদর। এর ওপর একটি করে সাধারণ বালিশ। কক্ষে রয়েছে ছোট বাথরুম। তবে নেই গরম পানি ও রান্নার ব্যবস্থা।
এমপি মং যা-ই বলুন না কেন, সু চির অনুগত হওয়ায় দীর্ঘ ১০ বছর জেলখাটা এমপি থেইন শোয়ের অনুভূতি কিছুটা ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘জেলখানায় দীর্ঘ সময় এত কঠিন পরিস্থিতিতে কাটিয়েছি যে, আমার জন্য এ রকম থাকার জায়গা মন্দ নয়।’
যদিও নতুন এই এমপিদের অধিকাংশ অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) থেকে নির্বাচিত, তবু অনেক ধৈর্য নিয়েই এখানে থাকতে হবে তাঁদের। অন্তত আগামী পাঁচ বছর। ১৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া এসব হোস্টেলকক্ষ আসলে নির্মাণ করা হয়েছিল বিরোধীদলীয় এমপিদের থাকার জন্য।
ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের থাকার হালচাল যখন এমন, তখন সেনা-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সরকারের এমপিদের অবস্থা অবশ্য খানিকটা ভিন্ন। যদিও দলের এমপি কে থিনের কথায়, ‘এখানে থাকাটাও আরামদায়ক নয়।’ থিন বলেন, ‘আগে আমাদের দল অনেক ভারী ছিল। কিন্তু এখন আমরা হাতে গোনা। তাই আমাদের থাকার ভবনগুলো খাঁ খাঁ করছে।’ তবে সেনাবাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকছেন বিলাসবহুল কিছু ভবন দখল করে। তাঁরা অবসরের পর সময় কাটানোর জন্য এগুলো আগেই বেছে নিয়েছেন। সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।