রিজার্ভ কমছে নেপালেরও, আমদানি সীমিত

নেপালের অর্থনীতির বড় উৎস পর্যটন ও রেমিট্যান্স। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন পর্যটন খাতে আয় কম ছিলপ্রতীকী ছবি

বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এর জেরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দেশটি উত্তাল হয়ে উঠেছে। অনেকটা একই অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালের রিজার্ভের ক্ষেত্রেও। দেশটিতে দ্রুত কমতে শুরু করেছে বৈদেশিক রিজার্ভ। এ কারণে নেপালে অপ্রচলিত ও শৌখিন পণ্যের আমদানি সীমিত করা হয়েছে। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেও। তবে নেপাল সরকার বলছে, তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো নয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, নেপালের অর্থনীতির বড় উৎস পর্যটন ও রেমিট্যান্স। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন পর্যটন খাতে আয় কম ছিল। এ ছাড়া করোনাকালে বিদেশে অবস্থানরত নেপালিরা দেশে রেমিট্যান্সও কম পাঠিয়েছেন। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতিতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।

আরও পড়ুন

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সর্বশেষ সাত মাসে নেপালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ শতাংশের বেশি কমে ৯৫৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এই তথ্য নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের’। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই সময়ে নেপালে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। অন্যদিকে দেশটির সরকারি ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের ৪৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপমুখপাত্র নারায়ণ প্রসাদ পোখারেল রয়টার্সকে বলেন, তাত্ত্বিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হয়, নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। অপ্রচলিত পণ্যের আমদানি সীমিত করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। এর ফলে নিত্যপণ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে না।

আরও পড়ুন

নারায়ণ প্রসাদ পোখারেল জানান, অর্থ পুরোপুরি পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকলে নেপালি আমদানিকারকেরা ৫০টি বিলাসদ্রব্য আমদানি করতে পারবেন। তবে গাড়ি, সোনা, কসমেটিকসের মতো অপ্রচলিত ও শৌখিন পণ্য আমদানি সীমিত রাখতে হবে। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, অপ্রচলিত ও বিলাসদ্রব্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মাহা প্রসাদ অধিকারীকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে দেশটির সরকার। এর পেছনের কারণ জানানো হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে আগেভাগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে।

তবে নেপালের অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমদানি স্বাভাবিক রাখতে ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

দেশটির অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা বলেছেন, ‘প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় নেপালের ঋণের পরিমাণ বেশ কম রয়েছে। এরপরও অনেকেই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের অর্থনীতির তুলনা করছেন। এটা আমাকে অবাক করেছে।’

একই মত বাজার অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষক অ্যালেক্স হোমসের। বিবিসিকে তিনি বলেন, নেপালের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক ভালো। যদি রিজার্ভের পরিমাণ আরও না কমে, তাহলে সংকট জোরালো না–ও হতে পারে।

আরও পড়ুন