করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে চীন ‘শূন্য করোনা’ নীতিতে হাঁটছে। করোনা মহামারির চেয়েও কর্তৃত্ববাদী এই নীতি ‘অমানবিক’ হয়ে উঠেছে। কারণ, করোনা সংক্রমণ শূন্যে নামিয়ে আনতে দেশটির কর্মকর্তারা ক্ষমতার মধ্যে থেকে সবকিছুই করছেন। এতে মানুষের জীবন ও মর্যাদার কোনো মূল্য নেই। দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও এমনটাই চান। আর তাঁর ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে করোনার ভয় ছাপিয়ে সাধারণ জনগণের ওপর নেমে আসছে নতুন যন্ত্রণার খড়্গ।
করোনা নয়, শূন্য করোনানীতি নতুন ভয়
শূন্য করোনানীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চীন অনেক ‘অমানবিক’ ঘটনা ঘটিয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শানজি প্রদেশের শহর জিয়ানে লকডাউন চলছে। এ পরিস্থিতিতে বুকে ব্যথা নিয়ে এক ব্যক্তি হাসপাতালে এলে তাঁকে ভর্তি করাননি ওই হাসপাতালের কর্মীরা। পরে চিকিৎসা না পেয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী চিকিৎসা নিতে ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সে সময় তাঁর রক্তপাত শুরু হয়। অথচ হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে সেবা না দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক নয়। পরে ওই নারীর গর্ভপাত হয়।
ক্ষুধার যন্ত্রণায় লকডাউন অমান্য করতে বাধ্য হন এক তরুণ। খাবারের সন্ধানে বাইরে বের হলে দুজন কমিউনিটি নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে আটক করেন। ওই তরুণ ‘খাবার নেই’ কথাটা জানালে এটা তাঁদের দেখার বিষয় নয় জানিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ব্যাপক মারধর করেন।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে জিয়ানে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণ রোধে জিয়ানের স্থানীয় সরকার কঠোর লকডাউন জারি করে। কিন্তু শহরটির প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার খাদ্য, চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করার জন্য তাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এ কারণে চরম বিশৃঙ্খলা ও সংকটের সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে উহানে জারি করা প্রথম লকডাউনের পর এতটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও সংকট দেশে আর দেখা যায়নি। শুরুর দিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপের সাফল্যই সরকারকে এ কর্তৃত্ববাদী নীতি আরোপ করতে উৎসাহিত করেছে। বাস্তবিক অর্থেই তাদের কাছে এখন সাধারণ মানুষের জীবনের চেয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই বছর আগে উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এতে চীনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আর এখন চীনে ‘নন-কোভিড’ রোগে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মানুষ। এসব পরিস্থিতি দেখেও জিয়ানে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কোনো ছাড় দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। জিয়ানের লকডাউন দেখিয়ে দিয়েছে, একক ইচ্ছায় শূন্য করোনানীতি বাস্তবায়নে দেশের রাজনৈতিক কৌশল কতটা স্থবির হয়ে আছে। কতটা নির্মম এ নীতি!
সরকার কমিউনিটির একটি বিশাল বাহিনীর সহায়তায় এ নীতি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ নীতি অমান্যকারী বা উদ্বেগ উত্থাপনকারীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছেন ওই বাহিনীর সদস্যরা।
‘দ্য ব্যানালিটি অব ইভিল’
চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম উইবোতে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যারা মন্দ কাজ করেছে (ব্যানালিটি অব ইভিল), তাদের দোষ দেওয়া খুব সহজ। যদি আপনি ও আমি এই বিশাল যন্ত্রের স্ক্রু হয়ে যাই, তাহলে হয়তো আমরাও এর শক্তিশালী টান প্রতিহত করতে পারব না।’
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মৃতপ্রায় অবস্থায় জিয়ানের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁর মেয়ে বাবাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য হাসপাতালের কর্মচারীদের কাছে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চেয়ে আকুতি জানান। পরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
‘দ্য ব্যানালিটি অব ইভিল’ এমন একটি ধারণা, যা চীনের বুদ্ধিজীবীরা জিয়ানের মতো পরিস্থিতিকে বলে থাকেন। এটি দার্শনিক ও চিন্তাবিদ হাননা আরেন্ডের একটি ধারণা। ‘আইখম্যান ইন জেরুজালেম: দ্য ব্যানালিটি অব ইভিল’ নামে তাঁর একটি প্রতিবেদক গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়ে সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বময়। হাননা কেবল বিচারে সীমাবদ্ধ থাকেননি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভয়ংকর হয়ে ওঠার পেছনের কার্যকারণ এ ধারণার মাধ্যমে তলিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন।
কতজন কর্মকর্তা ও বেসামরিক ব্যক্তি পেশাদার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা আনুগত্য দ্বারা পরিচালিত—কর্তৃত্ববাদী এ নীতি বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক, তা ভেবে চীনা বুদ্ধিজীবীরা বিস্মিত হয়েছেন।
দুই বছর আগে উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এতে চীনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আর এখন চীনে ‘নন-কোভিড’ রোগে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মানুষ। এসব পরিস্থিতি দেখেও জিয়ানে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কোনো ছাড় দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। জিয়ানের লকডাউন দেখিয়ে দিয়েছে, একক ইচ্ছায় শূন্য করোনানীতি বাস্তবায়নে দেশের রাজনৈতিক কৌশল কতটা স্থবির হয়ে আছে। কতটা নির্মম এ নীতি!
জিয়ানে যতটা কঠোর লকডাউন
২০২০ সালের শুরুর দিকে উহানে করোনায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছিল। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল শহরের স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা। সে সময় উহানের চেয়ে শানজি প্রদেশের রাজধানী জিয়ানের অবস্থা ভালো ছিল। এ শহরে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল মাত্র তিনজনের। এর মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তির মৃত্যু হয় ওই বছরের মার্চে। নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, জুলাইয়ের মধ্যে শহরটির ৯৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ টিকার আওতায় চলে আসে। তবে সম্প্রতি শুরু হওয়া করোনার ঢেউয়ে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জিয়ানে ২ হাজার ১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে শহরে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে।
লকডাউন জারি হওয়ায় শহরবাসীকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কিছু ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরের ৪৫ হাজারের বেশি মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য নির্ধারিত স্থানে পাঠানো হয়েছে।
করোনায় নজরদারি ও কোয়ারেন্টিন বাস্তবায়নের জন্য শহর কর্তৃপক্ষ হেলথ কোড সিস্টেম চালু করেছে। অতিরিক্ত চাপে ওই সিস্টেম ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো কিছুর সরবরাহ নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এসে অভিযোগ করছেন, তাঁদের ঘরে খাওয়ার মতো কিছু অবশিষ্ট নেই। এসব সমস্যা সমাধানে নজর নেই কারও। জনগণের এমন দুর্দশার পরও লকডাউন–সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ রয়েছে। তা মানতে হচ্ছে মানুষকে, ব্যত্যয় ঘটলেই নেমে আসছে নিপীড়ন।
কমিউনিটির কিছু স্বেচ্ছাসেবক এক তরুণের খাবারের খোঁজ না নিয়ে উল্টো তরুণকে তাঁদের খাবার কেনার জন্য নিয়োগ দেন। ওই তরুণকে ভিডিও ক্যামেরার সামনে এসে আত্মসমালোচনা করে একটি চিঠি পড়তে দেখা গেছে। অনলাইনে অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করেছে। ভিডিওতে ওই তরুণ বলছেন, ‘আমার কাছে খাওয়ার মতো কিছু আছে কি না, এটাই এখন আমার একমাত্র ভাবনার বিষয়। আমার এমন আচরণে কমিউনিটির ওপর কতটা মারাত্মক প্রভাব পড়বে, তা বিবেচনায় নিচ্ছি না।’ রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম দ্য বেইজিং নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই স্বেচ্ছাসেবকেরা পরে বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
শহর ছাড়ছে মানুষ
জিয়ানে লকডাউনে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে শহরবাসীকে। চিকিৎসা না পেয়ে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। জিয়ান থেকে পালিয়ে গ্রামাঞ্চলে যাওয়ার সময় এমন তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তীব্র শীতে দিন-রাত হেঁটে, মোটরসাইকেলে করে এমনকি সাঁতরে বহুদূরের পথ পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা। স্থানীয় পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে দুজন পুলিশের হাতে আটক হন।
লকডাউনের কারণে জিয়ানের হাসপাতালগুলো চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। প্রিয়জনকে শেষবারের মতো বিদায় বলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মৃতপ্রায় অবস্থায় জিয়ানের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁর মেয়ে বাবাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য হাসপাতালের কর্মচারীদের কাছে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চেয়ে আকুতি জানান। পরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
বাবা মারা যাওয়ার পর ওই মেয়ে উইবোতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, হাসপাতালে ঢুকতে আকুতি জানালেও হাসপাতালের এক পুরুষ কর্মী তাঁকে ঢুকতে দেননি। হাসপাতালের ওই কর্মী ভিডিওতে বলেন, ‘আমার নৈতিকতা ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন না। আমি শুধু দায়িত্ব পালন করছি।’
চিকিৎসাব্যবস্থার হাল
জিয়ানে চিকিৎসাব্যবস্থায় চরম অব্যবস্থাপনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্য–সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীকে শাস্তি দেওয়া হয়। চিকিৎসা নিতে গিয়ে যে নারীর গর্ভপাত হয়েছিল, তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন শহরের স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান। এ ছাড়া আরেকটি হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপককে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়।
গত শুক্রবার শহর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, করোনা পরীক্ষার কথা বলে কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র রোগীকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন মন্তব্য করেছে, কিছু স্থানীয় কর্মকর্তা চিকিৎসাব্যবস্থার এ অব্যবস্থাপনার জন্য কেবল তাঁদের অধীন কর্মচারীদের দায়ী করছেন। সম্প্রচারমাধ্যমটি এমন মন্তব্যও করেছে, এসব সমস্যার ক্ষেত্রে শুধু নিম্নপদস্থ ক্যাডার অর্থাৎ কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর জ্বরাক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ প্রটোকল ভঙ্গ করায় চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসককে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ভিন্নমত রোধে অনলাইনে নজরদারি
করোনা নিয়ন্ত্রণে শূন্য করোনানীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নমত গ্রহণ করছে না সরকার। এমনকি অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ এ নীতির সমালোচনা করলে তা নজরদারি করা হচ্ছে। ভিন্নমত বা সমালোচনাকারীকে হুমকি দিয়ে চুপ করে রাখা হচ্ছে। কাউকে দেওয়া হচ্ছে শাস্তিও।
বেইজিংয়ের একটি সরকারি সংস্থার উপপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জিয়ানের লকডাউন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি পোস্ট লিখেছিলেন। সেই পোস্টে অসত্য তথ্য আছে বলে অভিযোগ জানান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো কোনো ব্যবহারকারী। এ কারণে গত সপ্তাহে ওই কর্মকর্তা তাঁর পদ হারিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করা ওই নিবন্ধে লিখেছিলেন, এ লকডাউন ‘অমানবিক’ ও ‘নিষ্ঠুর’।
উহানের ঘটনার পর থেকেই চীনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা চীন, সরকার এবং কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসা করার জন্য জাতীয়তাবাদীদের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এতে কোনো ভিন্নমত বা সমালোচনা সহ্য করা হচ্ছে না। চীনের সামাজিক যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্মে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত ব্যক্তির মেয়ের একটি পোস্ট সেন্সর করে দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলেছে, ওই পোস্টে ‘সমাজ সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য ছিল’। ওই পোস্টদাতা মেয়ের অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশটে এ তথ্য জানা গেছে।
লেখক ফ্যাং ফ্যাং, নাগরিক সাংবাদিক চেন কিউশি, ফ্যাং বিন ও ঝাং ঝানের এ পরিস্থিতিতে কোনো সাড়া নেই। উহানের লকডাউন নিয়ে ডায়েরি লিখেছিলেন ফ্যাং ফ্যাং। কিন্তু জিয়ানে ফ্যাং ফ্যাংয়ের মতো ডায়েরি লেখা আর কোনো লেখক নেই। এ ছাড়া চেন কিউশি, ফ্যাং বিন বা ঝাং ঝানের মতো কোনো নাগরিক সাংবাদিকও এসব নিয়ে কোনো ভিডিও পোস্ট করছেন না। তাঁদের চারজনকে হয়তো চুপ করে দেওয়া হতে পারে, আটক করা হতে পারে, গুম করে দেওয়া হতে পারে বা হয়তো তাঁদের কারাগারে মৃত্যুও হতে পারে। জিয়ান নিয়ে কথা যেন আর কেউ বলার সাহস করতে না পারে, সে জন্য ওই চারজনকে এমন শাস্তি দিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
জিয়ানের লকডাউন নিয়ে ব্যাপক সম্প্রচার হওয়া ও গভীরতর নিবন্ধটি লিখেছেন সাবেক নারী সাংবাদিক ঝাং ওয়েনমিন। জিয়ানের বাসিন্দা ওই সাংবাদিক জিয়াং জুয়ে নামে পরিচিত। জিয়াং জুয়ের ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর লেখাটি সে সময় সরিয়ে ফেলা হয়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাঁকে এ বিষয়ে আর কোনো কথা না বলতে সতর্কও করে দিয়েছেন। কিছু কিছু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারী অবশ্য তাঁকে ‘আবর্জনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
চীনের এ পরিস্থিতি জানেন এমন লোকজন বলছেন, চীনের কয়েকটি গণমাধ্যম সংস্থার সাংবাদিকেরা উহানের বাইরে থেকে দুর্দান্ত কিছু অনুসন্ধানী নিবন্ধ লিখেছিলেন। ওই সংস্থাগুলো তাদের সাংবাদিকদের জিয়ানে পাঠায়নি। কারণ, তারা সেখানে জারি করা লকডাউনে সাংবাদিকদের অবাধে চলাফেরার পাস নিতে পারেনি।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে জিয়ান শহরের এ যুদ্ধকে গত সপ্তাহে বিজয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার নিজেই অনেক নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। বরং লকডাউন শেষ করার জন্য আরও কঠোর হচ্ছে।
এদিকে শানজি প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি জিয়ানের কর্মকর্তাদের সোমবার বলেছেন, ‘একটি সুইয়ের ছিদ্র দিয়েও অনেক বাতাস ঢুকে যেতে পারে।’ তাই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আরও ‘কঠোর’ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
●ইংরেজি থেকে অনুদিত