স্বর্ণপদকজয়ী ইঁদুরের মৃত্যু

মাগাওয়া তার পাঁচ বছরের কর্মজীবনে ১০০টির বেশি স্থলমাইন ও অন্য বিস্ফোরক খুঁজে বের করে।
ছবি : এএফপি

কর্মজীবনে এসেছে একের পর এক সফলতা। বীরত্বের জন্য জুটেছে স্বর্ণপদকের মতো সম্মাননাও। স্থলমাইন খুঁজে বের করে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচানো কম্বোডিয়ার সেই ইঁদুর মাগাওয়া মারা গেছে। ইঁদুরটির বয়স হয়েছিল আট বছর। গত বছরের জুনে মাইন খোঁজার কাজ থেকে অবসরে যায় প্রাণীটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, মাগাওয়া তার পাঁচ বছরের কর্মজীবনে ১০০টির বেশি স্থলমাইন ও অন্য বিস্ফোরক খুঁজে বের করে। মাগাওয়ার জন্ম আফ্রিকায় হলেও কর্মস্থল ছিল কম্বোডিয়ায়।

মাইন খুঁজে বের করতে বেলজিয়ামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান অ্যাপোপো ইঁদুরকে প্রশিক্ষণ দেয়। কম্বোডিয়াজুড়ে আনুমানিক ৬০ লাখ মাইন পুঁতে রাখা আছে বলে ধারণা করা হয়। সেসব মাইন শনাক্তের কাজে আফ্রিকার তানজানিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে নিয়ে আসা হয় মাগাওয়াকে। বেলজিয়ামে নিবন্ধিত তানজানিয়াভিত্তিক দাতব্য সংস্থা অ্যাপোপোতে অনেক ইঁদুরকে মাইন শনাক্তের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

১৯৯০ সাল থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া এসব ইঁদুরকে বলা হয় ‘হিরো র‍্যাটস’। মাগাওয়া ছিল সেসব সাহসী ইঁদুরের একটি।

অ্যাপোপো জানায়, গত সপ্তাহেও মাগাওয়ার শরীর ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে নড়াচড়া কমিয়ে দেয়, বেশির ভাগ সময় ঘুমাত। শেষ কয়েক দিন খাবারের প্রতিও তার আগ্রহ ছিল না।

কম্বোডিয়ায় মাইন সরানোর কাজে যুক্ত কম্বোডিয়ান মাইন অ্যাকশন সেন্টারের (সিএমএসি) অধীনে কাজ করত মাগাওয়া। সে অবসরে যাওয়ায় সিএমএসিকে প্রশিক্ষিত নতুন একদল ইঁদুর সরবরাহ করেছে অ্যাপোপো।

অ্যাপোপো কর্তৃপক্ষ বলেছে, টেনিস খেলার একটি মাঠের সমান কোনো জায়গায় মাইন আছে কি না, তা মাত্র ২০ মিনিটেই বের করে ফেলতে পারত মাগাওয়া। যে কাজটি একটি মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে কোনো মানুষকে করতে এক থেকে চার দিন লাগে।

মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে মাগাওয়া পিডিএসএ স্বর্ণপদক অর্জন করে। প্রাণীদের সাহসী কর্মকাণ্ডের জন্য এ স্বর্ণপদক দেওয়া থাকে। এ সম্মাননাকে বলা হয় প্রাণীদের জন্য জর্জ ক্রস পদক। ব্রিটিশ সরকার এটা প্রদান করে। অ্যাপোপোর ৭৭ বছরের ইতিহাসে মাগাওয়াই প্রথম প্রাণী, যে পিডিএসএ পদক অর্জন করে।

অ্যাপোপোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাগাওয়াকে হারানোর বেদনা অনুভব করছি আমরা। সে যে অসাধারণ কাজ করেছে, তার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’