ওপর থেকে পড়ছে বোমা, চারদিক থেকে আসছে গোলা

ইসরায়েলি জঙ্গি বিমান থেকে গাজায় নিক্ষেপ করা বোমায় জ্বলছে আনসার বাহিনীর কম্পাউন্ড। গাজা, ১৪ মেছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। কয়েক দিন ধরে চলা বিমান হামলার পাশাপাশি শুক্রবার ফিলিস্তিনিদের ঘর-বাড়ি লক্ষ্য করে গোলা নিক্ষেপ করেছে তারা।

শুক্রবার ভোররাতে ৪০ মিনিটের হামলায় ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক মা ও তাঁর তিন শিশু সন্তান রয়েছে। নিজেদের ঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, শুক্রবারের এই হামলায় বিমান ও পদাতিক বাহিনী অংশ নিয়েছে। তবে তাঁরা গাজা সীমান্তে প্রবেশ করেনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথন কনরিকাস বলেছেন, ১৬০টি জঙ্গি বিমান এই অভিযানে অংশ নেয়। এর পাশাপাশি গাজার বাইরে অবস্থান নিয়ে ট্যাংক ও কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়।

ভিডিওতে ইসরায়েলি আর্টিলারি, গানবোট ও বিমান থেকে নিক্ষেপ করা গোলা ও বোমায় গাজার রাতের আকাশ জ্বলে উঠতে দেখা যায়।

এদিকে শুক্রবার পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে একশ’র বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, রামাল্লার উত্তরে অফরায় সেনা চৌকিতে এক দুষ্কৃতকারী একজন সেনা সদস্যকে ছুরিকাঘাত করতে এলে তাকে ‘নিরস্ত্র’ করা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত ব্যক্তি পশ্চিম তীরে নিহত চারজনের মধ্যে রয়েছেন।

অপর দিকে শুক্রবার পঞ্চম দিনের মতো গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্য এখন যে সংঘাত চলছে, তা ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে বড় আকারের। গত সোমবার রাত থেকে চলা পাল্টাপাল্টি এই হামলায় গাজায় ১১৯ জন এবং ইসরায়েলে আটজন নিহত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘তাঁরা আমাদের রাজধানীতে হামলা করেছে। তাঁরা আমাদের শহরগুলোতে রকেট নিক্ষেপ করেছে। এর মাশুল তাঁরা দিচ্ছে এবং দিতে থাকবে। এটা এখনো শেষ হয়নি।’

গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের মোতায়েন করা ট্যাংক বহর। গাজা, ১৪ মে
ছবি: রয়টার্স

অপর দিকে হামাসের এক সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্থল অভিযানের দিকে গেলে তাদের ‘চরম শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত তাঁরা।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সাত হাজার সেনা সদস্যকে গাজা সীমান্তে মোতায়েন করে। পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় ট্যাংক। তারা বলেছে, স্থল অভিযানও তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে ইসরায়েলের ভেতরে ইহুদি ও ইসরায়েলি আরবদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজ দেশের মধ্যে শুরু হওয়া এই অস্থিরতা দমনে ব্যাপকভাবে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির পুলিশ এই অস্থিরতার জন্য ইসরায়েলি আরবদের দায়ী করেছে। ইসরায়েলি আরবদের বাড়ি-ঘরে হামলাকারী ইহুদি যুব গ্রুপে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

ঘর-বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলি সেনারা অভিযান শুরু করতে পারে এই ভয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা ফিলিস্তিনিরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন। গাজার শেজাইয়া এলাকা ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, সেখানে বাড়ি-ঘরে ইসরায়েলিদের ছোড়া গোলা এসে পড়ছে।

বোমা হামলার মুখে পরিবার নিয়ে পালিয়ে আসা সালওয়া আল-আত্তার বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছিল যেন ভয়ঙ্কর সিনেমার মধ্যে আছি। আমাদের মাথার উপরে জঙ্গি বিমান এদিকে ট্যাংক ও নৌবাহিনী থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আমরা নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। নারী, শিশু ও পুরুষরাও চিৎকার করছিল।’

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পাশাপাশি ট্যাংক ও কামান থেকে গোলা নিক্ষেপে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ঘর–বাড়ি ছেড়ে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। গাজা, ১৪ মে
ছবি: এএফপি

গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়া শহরেও রাতে ব্যাপক গোলাবর্ষণ হয়। কোনো রকমে রাত পার করে সন্তানদের নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন রেয়া মারৌফ। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ঠাঁই হয়েছে এই মায়ের। সেখানে তাঁর মতো ঘর-বাড়ি ছেড়ে আসা আরও অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন।

এ ছাড়া রাস্তায় বহু মানুষকে গাড়ি বা পায়ে হেঁটে যে যেভাবে পেরেছেন দক্ষিণের দিকে ছুটে যেতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রেয়া মারৌফ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঘরে বসেছিলাম। হঠাৎ চারদিক থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু হয়। আমাদের সামনের বাড়িতে বোমা পড়ে। বোমার টুকরো এসে আমাদের ঘরেও আঘাত করে। আমরা যে ঘর ফেলে এসেছি তাতেও বোমা পড়েছে কি না সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই।’

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলেছে, শত শত মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয়ের জন্য এসেছে। সেখানে যেন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে তারা।