কাতারে দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান নতুন রাষ্ট্রদূত

রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো

নতুন বছরে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার কাতারের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চান নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন। এ জন্য কাতারের জাতীয় ভিশন ২০৩০ ও বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১–এর মধ্যে সমন্বয় করে এগোতে চান তিনি।

২০২২ সালে কাতার আয়োজন করছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। ইতিমধ্যে স্টেডিয়ামসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অনেকটা শেষ হয়েছে। ফলে দিন দিন অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা কমে আসছে। বিপরীতে বাড়ছে এসব পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনশক্তির চাহিদা।

এ অবস্থায় কাতারের শ্রমবাজারে দক্ষ বাংলাদেশি জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে আগ্রহী বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন। পাশাপাশি অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন খাতে অদক্ষ ও আধা–দক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের দিকে নজর রাখছে দূতাবাস।

কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে জসীম উদ্দিন তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনা ও গত তিন মাসে গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপে রাষ্ট্রদূত বলেন, কাতারের শ্রমবাজারে দিন দিন দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। আমরা সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখছি। কোন কোন খাতে চাহিদা বেশি, তা খুঁজে বের করতে কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে কাতারে বাংলাদেশ থেকে প্রকৌশলী, চিকিৎসক ও নার্স এবং আইটি বিশেষজ্ঞদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে কাতারে কর্মরত অভিজ্ঞ বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তবে কাতারে আসার আগে ঢাকায় যাতে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে।

জসীম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে যেসব দক্ষ বাংলাদেশি পেশাজীবী কাতারে কাজ খুঁজছেন, তাঁদের কাছে বিভিন্ন খাতে কাজের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরার পরিকল্পনা করছে দূতাবাস।

কাতারের শ্রমবাজারে দিন দিন দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। আমরা সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখছি। কোন কোন খাতে চাহিদা বেশি, তা খুঁজে বের করতে কাজ করছি
মো. জসীম উদ্দিন, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

রাষ্ট্রদূত মনে করেন, কাতার থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর সম্ভাবনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। পাশাপাশি দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সে জন্য গত বছর কাতারে অনুষ্ঠিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ মেলা ও ওষুধ শিল্পের প্রতিনিধি দলের সফর পরবর্তী বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এই সুযোগ ও সম্ভাবনা এগিয়ে নিতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক বহুমাত্রিক উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করা এবং জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ-কাতার ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক সুদৃঢ় করা গেলে দুই দেশের জন্যই তা লাভজনক। এ লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি দুই দেশের রূপকল্পের লক্ষ্য সমন্বয় করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি বছরের শুরুতে দোহায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কাতারের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে। গত বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আমরা প্রবাসীদের ফিরে আসার বিষয়টি কাতারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফায় জানিয়েছি। তাদের পররাষ্ট্র ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্রমান্বয়ে সবাই ফিরতে পারবেন। ইতিমধ্যে অনেকে ফিরেছেন
মো. জসীম উদ্দিন, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলথানির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমি মহামান্য আমিরকে বলেছি, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ আপনার সফরের অপেক্ষায়। এ সময় কাতারের আমির বাংলাদেশ সফরে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, দুপক্ষের জন্য সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন।’

করোনায় বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের ফেরানোর বিষয়ে গত কয়েক মাসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আলাপ–আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের ফিরে আসার বিষয়টি কাতারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফায় জানিয়েছি। তাদের পররাষ্ট্র ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্রমান্বয়ে সবাই ফিরতে পারবেন। ইতিমধ্যে অনেকে ফিরেছেন।’

কাতারে কিছু বাংলাদেশি শ্রমিকের অসন্তোষ ও বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের সাম্প্রতিক কর্মবিরতির কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে দূতাবাস সজাগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী এ দেশের নির্মাণ ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। কাজেই কিছু মানুষের কারণে লাখো কর্মীর অবদান আমরা ছোট হতে দেব না।’

রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি কাতারে মানবিক কাজের জন্য পুরস্কৃত বাংলাদেশি তরুণ ইয়াছিনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি এ দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছি, এমন ইয়াছিনরাই আসল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’

দায়িত্ব গ্রহণের পর কাতারে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেছেন রাষ্ট্রদূত। এসব সাক্ষাৎ ও বৈঠকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসীদের মধ্যে নানারকম প্রতিভা ও সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।

কাতারে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি স্থানীয় আইনকানুন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কাতারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িয়ে আছি। প্রবাসীরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে আমাদের জন-কূটনীতি বাস্তবায়নে দূতাবাসের পাশাপাশি সম্পূরক ভূমিকা রাখতে পারেন। কাজেই কারও কারণে যেন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়, সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।