কাতারের ওপর থেকে অবরোধ উঠে যাচ্ছে?

সৌদি বাদশা সালমান ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল–থানি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে সবার কাছে আগামীকাল ৫ জানুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কাল সৌদি আরবে উপাসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) সদস্য দেশগুলোর ৪১তম সাধারণ অধিবেশন বসছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এই অধিবেশনে কাতারকেন্দ্রিক চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের সুসংবাদ আসতে পারে। পারস্পরিক বিভেদ ভুলে ঐক্যের সম্মিলিত ঘোষণা দিতে পারেন জিসিসির নেতারা। অবশ্য এখনো নিশ্চিত করে জিসিসির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

১ হাজার ৩১০ দিন আগে ২০১৭ সালের ৫ জুন কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই কাতারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর। শুরু হয় নানা জটিলতা, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে জনগণ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভেদ।

জিসিসির সদস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশ। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নেয় সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইন। নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকে ওমান, আর মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কুয়েত।

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সমাধান মেলেনি কাতার সংকটের। কুয়েতের প্রয়াত আমির শেখ সাবা এই সংকট নিরসনে শুরু থেকে দৌড়ঝাঁপ করেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান। এর মধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েফ এরদোয়ানও সংকট সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন, তবে লাভ হয়নি। এমনকি বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগও আলো দেখেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের গণমাধ্যমে কাতারবিরোধী প্রচার বন্ধ হওয়া এর অন্যতম আলামত বলে মনে করছেন তাঁরা। ...একইভাবে কাতারের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপাতত সৌদি জোটবিরোধী কোনো খবরাখবর ছাপা হচ্ছে না, আল-জাজিরাও রিষ্ক্রিয় ভূমিকায়

তবে সৌদি আরবের এই সম্মেলন থেকে কাতার সংকট সমাধানের ঘোষণা আসবে—বিশ্লেষকেরা এমনটা অনুমান করছেন নানা কারণে। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের গণমাধ্যমে কাতারবিরোধী প্রচার বন্ধ হওয়া এর অন্যতম আলামত বলে মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি ডিসেম্বরে শুরু থেকে টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৌদি সমর্থনপুষ্ট অ্যাকাউন্টগুলো থেকে কাতারের বিরুদ্ধে প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে কাতারের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপাতত সৌদি জোটবিরোধী কোনো খবরাখবর ছাপা হচ্ছে না, আল-জাজিরাও রিষ্ক্রিয় ভূমিকায়।

উপসাগরীয় অঞ্চলের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সৌদি আরব সরকার সম্প্রতি তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে—ইয়েমেনে হামলা বন্ধ করা, সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ ধরপাকড় বন্ধ রাখা এবং কাতার সংকট নিরসন করা। এ জন্য মাস তিনেক ধরে কাতার সংকট সমাধানে যেসব আলাপ চলছে, তাতে মূলত কাতার ও সৌদি আরবই মূল চালিয়ে যাচ্ছে।

জিসিসির সদস্যরাষ্ট্র না হয়েও এবারের সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আল–সিসি। ২ জানুয়ারি তাঁকে পাঠানো এক চিঠিতে কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ কাতার সংকট সমাধানে কুয়েতি প্রচেষ্টার সর্বশেষ তথ্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি আরব জাতির ঐক্যের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন।

কাতার সংকটের ঘোষণা এলে চার দেশের মধ্যে সবার আগে দৃশ্যমান হবে বিমান যোগাযোগ। ফলে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি কার্গোখাতও সচল হয়ে উঠবে, যা থেকে উপকৃত হবে লাখো মানুষ

ফলে এবারের সম্মেলনে কাতারবিরোধী সৌদি জোটের অন্যতম সদস্য মিসরের উপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, কাতারের সঙ্গে উপসাগরীয় তিন দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষণা এলে মিসরও তাতে যোগ দেবে।

কাতারের একমাত্র স্থলসীমান্ত সৌদি আরবের সঙ্গে, যা আবুসামরা সীমান্ত নামে পরিচিত। দুদিন ধরে টুইটারে এই সীমান্তপথের ছবি পোস্ট করে কাতারের নাগরিকেরা লিখছেন, ‘এবার যদি এই পথ না খুলে, তবে যেন আর কখনোই না খুলে।’

ইতিমধ্যে ২০২০ সালের শেষ দুমাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কাতারের আকাশ ও জলসীমা একাধিকবার লঙ্ঘন করেছে বাহরাইন। এ নিয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করেছে কাতার। এই একটি জটিলতা ছাড়া আপাতত সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।

কাতার সংকটের ঘোষণা এলে চার দেশের মধ্যে সবার আগে দৃশ্যমান হবে বিমান যোগাযোগ। ফলে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি কার্গোখাতও সচল হয়ে উঠবে, যা থেকে উপকৃত হবে লাখো মানুষ। এর প্রথম সুফল পাবেন সৌদি-কাতার-আমিরাত-বাহরাইনের নাগরিকদের মিশ্র পরিবারগুলোর, যাদের এতকাল কুয়েত বা ওমান হয়ে কাতারে যাতায়াত করতে হতো।

একই সঙ্গে সমুদ্রপথে এসব দেশের মধ্যে বাণিজ্য যোগাযোগে আসবে নতুন গতি। আর তাই, এই সংকট সমাধানের অপেক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রহর গুনছেন স্থানীয় ও বিদেশি ব্যবসায়ীরা।