গাজায় হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ

মেলবোর্নে আজ শনিবার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ
ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্কে। বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলি দূতাবাসে পাথর ছোড়াকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়ায় ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। ফ্রান্সের প্যারিসে বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফরাসি কর্তৃপক্ষ। এরপরও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে।

গাজায় কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৯ শিশুসহ ১৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার। পূর্ব জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গত সোমবার থেকে গাজায় এ হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সরকার। এ ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে কথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন। দুই নেতা গাজায় ইসরায়েলের নিন্দনীয় হামলা বন্ধের দাবিতে একমত হয়েছেন বলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান।

এক টিভি ভাষণে মহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। আমরা একমত হয়েছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত ইসরায়েলের সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে ও ফিলিস্তিনিদের প্রাণ বাঁচানোর পদক্ষেপ নেওয়া।’

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্নে বিক্ষোভ হয়েছে। সিডনিতে টাউন হলের সড়কগুলোতে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। সেখানে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। মেলবোর্নে ভিক্টোরিয়া স্টেট লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন কয়েক শ বিক্ষোভকারী। মিছিল নিয়ে তাঁরা পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত যান। বিক্ষোভকারীদের অনেকে ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

এদিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। তবে সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আদালতও বিক্ষোভের বিরুদ্ধে একটি নির্দেশ জারি করেন। বিক্ষোভ আয়োজনকারীরা বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে আমাদের নীরব করে দেওয়াকে প্রত্যাখ্যান করি। বিক্ষোভ প্রদর্শন করা থেকে আমাদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’ পরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন।

প্যারিস ছাড়াও লিওঁ, বোর্দো, মার্সেইসহ ফ্রান্সের অন্যান্য শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন মানুষ। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস দেশটিতে। এ ছাড়া ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইহুদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস ফ্রান্সে।
গতকাল শুক্রবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়। দেশটিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। সেখান থেকে তিন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে ডেনিশ পুলিশ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের বরাতে এ খবর দিয়েছে এএফপি।

সিডনিতে ইসরায়েলবিরোধী বিশাল জমায়েত। ১৫ মে, টাউন হল
ছবি: এএফপি

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কোপেনহেগেনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন চার হাজার মানুষ। একপর্যায়ে দূতাবাসের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীদের একাংশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের ওপরও পাথর নিক্ষেপ করেন তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে।
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় হতাহতের জন্য দশটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছে মিসর।

এদিন রাফাহ সীমান্ত দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো গাজায় প্রবেশ করে। ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে পাঁচ দিন সীমান্তটি বন্ধ ছিল। সোমবার সেটি খুলে দেবে মিসর। আরও পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গাজা থেকে আহত লোকজনকে চিকিৎসার জন্য মিসরে নিয়ে আসবে অ্যাম্বুলেন্সগুলো। দেশটির কয়েকটি হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। স্থানীয় সূত্র ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর দিয়েছে রয়টার্স।

বার্তা সংস্থাটি আরেক খবরে জানিয়েছে, মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় চল্লিশ টন খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছেন। গাজায় সহিংস হামলার নিন্দা জানান তিনি। এ সংঘাত বন্ধে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্রনীতির প্রতি সমর্থন জানান মরক্কোর বাদশাহ। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে মরক্কো।