মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান, ইরানের বিশাল সামরিক মহড়া

ইরানের সামরিক মহড়ায় সেনা সদস্যরা।
ছবি: এএফপি

ওমান সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাওয়ার পর বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে ইরান। আধুনিক সব সামরিক সরঞ্জামসহ গতকাল রোববার নৌ, স্থল ও আকাশপথে ওই মহড়া শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন হাজারো সেনা সদস্য।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া মহড়াটি সেনাসদস্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নৌযান, সাঁজোয়া যান, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার ব্যবস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা—উভয় সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ওমান সাগরে একটি তেলবাহী ট্যাংকারকে আটক করা নিয়ে ইরানের এলিট বাহিনী ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড সদস্যদের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থানের পরপরই এই মহড়া শুরু করল তেহরান।

মহড়া শুরুর আগে ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান আবদুলরহিম মুসাভি দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে বলেন, হরমুজ প্রণালির পূর্বে, ওমান সাগরে ও ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।

স্থল মহড়াও আয়তনও বিশাল। সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাধারণ এলাকা, হরমোজগানের পাশাপাশি মাকরানের উপকূলীয় এলাকায় এই মহড়া শুরু হয়েছে।

ইরানের কোনারাকের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান আরও বলেন, ‘এই এলাকায় আমাদের বাহিনী সমবেত হওয়ার পর আমাদের শত্রু প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে আমরা অবগত হয়েছি। তাই শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে কয়েক দিন আগে থেকে নেওয়া আমাদের প্রচেষ্টা আজ থেকে আরও বেগবান করা হয়েছে।’

ইরানের ওই বিশাল সামরিক অভিযান কয়েক দিন চলবে। সেনাপ্রধান মুসাভি প্রথম দিনের মহড়ার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নৌযান ও কমান্ডোরা শত্রুর উপকূলীয় প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে দিতে অভিযান পরিচালনা করবে। পাশাপাশি নিজেদের উপকূলীয় প্রতিরক্ষা লাইন সুরক্ষা রাখতে ইরানের বাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার ব্যবস্থা প্রস্তুত করা হবে।

ইরানের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল সামরিক বাহিনীর মহড়ার ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে। সেখানে দেখা গেছে, স্পিডবোটগুলো সমুদ্রে কলাকৌশল প্রদর্শন করছে। সেনারা হেলিকপ্টারে করে পরিস্থিতি নজর রাখছেন। কমান্ডোরা উড়োজাহাজ থেকে প্যারাসুটে করে সৈকত এলাকায় নামছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা, ইসরায়েলের হুমকি ও প্রতিবেশী আজারবাইজানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ইরানের সেনাবাহিনী ও ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড সম্প্রতি বেশ কিছু সামরিক মহড়া করেছে।

ইরানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী নতুন করে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় গত বুধবার। ইরান থেকে তেল নিয়ে যাওয়ার পথে ওমান সাগরে ভিয়েতনামের পতাকাবাহী একটি ট্যাংকার আটকের চেষ্টা করে মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড তাতে বাধা দেয়। তবে ওই ট্যাংকারটির গন্তব্যস্থল কোথায় ছিল জানা যায়নি। ট্যাংকার আটকে মার্কিন চেষ্টা আটকে দেওয়ার ঘটনায় ইরানের সামরিক শক্তির প্রশংসা করেই চলেছেন ইরানের সামরিক কর্মকর্তারা।

রোববার রেভ্যুলেশনারি গার্ডের রাজনৈতিক সহকারী ইয়াদোল্লাহ জাভানি রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, ইরানের তেল বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দেশটি এক তরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বলপ্রয়োগ করছে। কিন্তু আমেরিকানেরা ইরানিদের ক্ষমতার বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন।

২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের সঙ্গে করা ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে। সেই থেকে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। মাঝে মাঝে সামরিক উত্তেজনাও দেখা দেয় দেশ দুটির মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন এখন ওই চুক্তিতে ফিরতে আগ্রহী। এ জন্য ইরানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ক্ষমতাধর দেশগুলো। ইরান বুধবার জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তাহলে তারা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে।