রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। পাশে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তেহরান, ১৯ জুন।
ছবি: এএফপি

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রক্ষণশীল নেতা হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম রাইসি (৬০)। আজ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে রাইসি ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে  প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট দুই কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহসিন রেজাই পেয়েছেন ৩৪ লাখ, ১২ হাজার ৭১২ ভোট। এ ছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা আবদুল নাসের হেমাতি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ২০১ ভোট এবং চতুর্থ স্থানে থাকা আমির হাসেমি পেয়েছেন ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৮ ভোট।

ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর এবারই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। এবার মাত্র ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে ৩৭ লাখেরও বেশি ভোট বাতিল হয়েছে। এর আগে কোনো নির্বাচনে এত বেশি ভোট বাতিলের ঘটনা ঘটেনি।
রাইসি নির্বাচনী প্রচারে তিনি ভোটারদের সামনে নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোর বিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন। আগামী আগস্ট মাসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মধ্যপন্থী হাসান রুহানির কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নেবেন তিনি। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকা বেআইনি হওয়ায় রুহানি তৃতীয়বার নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন নি।

আগেই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের অযোগ্য ঘোষণা করায় সমালোচকেরা এই নির্বাচন ঘিরে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু রাইসির সমর্থকদের চোখে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এবং গভীর অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য তিনিই একমাত্র ভরসা।
রাইসি বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য কাজ করে গেছেন। নির্বাচনী প্রচারেও সে বিষয়টি সামনে এনেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৪০ লাখ বাড়ি তৈরির কথাও বলেছেন। তাঁর বড় প্রতিশ্রুতি হচ্ছে শক্তিশালী ইরান গঠনের জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

ইরানের অনেক গণমাধ্যমের চোখে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয় রাইসিকে। খামেনির বয়স আগামী মাসে ৮২ বছর হবে। ২০১৯ সালে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাইসিকে নিয়োগ দেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।

রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির করা পারমাণবিক চুক্তির কী হবে—তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ২০১৫ সালে বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে করা ইরানের পরমাণু চুক্তি হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে অন্যান্য অতি কট্টরপন্থীর মতো রাইসিও রুহানি শিবিরের সমালোচনা করেন। সেই সময় ইরানের ওপর পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপও করে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র। তবে অন্যান্য রাজনীতিকের মতোই রাইসি ইরানের অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য ওই পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার সমর্থন করেছেন।

উত্তর–পূর্ব ইরানের মাশহাদ শহরে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাইসি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি কারাজ শহরের প্রসিকিউটর জেনারেল হন। ১৯৮৮ সালে তেহরানের বিপ্লবী আদালতের ডেপুটি প্রসিকিউটর ছিলেন। ওই সময়ে মার্ক্সবাদী ও অন্যান্য বামপন্থীকে গণহত্যার সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত ছিল। কয়েক দশকের বিচারকার্যে অভিজ্ঞ রাইসি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেল, ২০০৪ সাল পর্যন্ত জুডিশিয়াল অথরিটির ডেপুটি চিফ ও ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে কাজ করেন।