শেষ পর্যন্ত প্রার্থী চারজন, ভোটারদের আগ্রহ কম

বিতর্কে অংশ নেন ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীরা।ছবি: রয়টার্স

ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। পারমাণবিক প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কয়েক বছর ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানের এবারের নির্বাচন শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কেননা ভিয়েনায় ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে তেহরান। পারমাণবিক প্রকল্প থেকে সরে আসা, বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া—এটা নিয়ে চলছে দর-কষাকষি। তাই এই আলোচনার ভাগ্য নির্ধারণে ইরানের পরবর্তী রাজনৈতিক নেতৃত্ব বড় ভূমিকা রাখবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের মোট ভোটার ৫ কোটি ৯৩ লাখের কিছু বেশি। এঁদের মধ্যে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার নারী ও ২ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার পুরুষ। এবার প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ইরানের ১৩ লাখ তরুণ। তাই এবারের নির্বাচনে নারী ও তরুণ ভোটাররা প্রভাবক হয়ে উঠতে পারেন।

এবারের নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকে নাটকীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে ইরানের রাজনীতি। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদসহ কয়েকজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে আগেই। ভোট গ্রহণের প্রাক্কালে গতকাল বুধবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন পারমাণবিক চুক্তিতে দেশটির সাবেক আলোচক সায়েদ জালিলি, আইনপ্রণেতা আলিরেজা জাকানি ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহসিন মেহেরআলিজাদেহ। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটের লড়াইয়ে টিকে রয়েছেন চারজন প্রার্থী।

ইরানের প্রধান বিচারপতি ইব্রাহিম রাইসি।
ছবি: রয়টার্স

ইব্রাহিম রাইসি

ইরানের প্রধান বিচারপতি ইব্রাহিম রাইসি। এবারের নির্বাচনে দেশটির শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও রক্ষণশীল রাজনীতিকদের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। তাই ধারণা করা হচ্ছে, ভোটের ফলে চূড়ান্ত হাসি তিনিই হাসবেন। তিনি ২০১৭ সালের নির্বাচনেও প্রেসিডেন্ট হতে লড়েছিলেন। হাসান রুহানির বিরুদ্ধে জয় পাননি। তবে ভোট পেয়েছিলেন ৩৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাঁকে। ৬০ বছর বয়সী রাইসিকে ইরানের পরবর্তী শীর্ষ নেতার পদে অন্যতম দাবিদার বিবেচনা করা হয়। নির্বাচনী প্রচারে তিনি ভোটারদের সামনে নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোরবিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন।

আবদুল নাসের হেমাতি।
ছবি: রয়টার্স

আবদুল নাসের হেমাতি

নিজেকে মধ্যপন্থী ও বাস্তববাদী হিসেবে পরিচয় দেন আবদুল নাসের হেমাতি। পেশাগত জীবনের শুরুতে হেমাতি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করেছেন। দেশটির ব্যাংক ও বিমা খাতের প্রভাবশালী মুখ তিনি। পরে তিনি ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হন। দেশটির অর্থনীতির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ সামলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নামায় হাসান রুহানি তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেন। এবারের নির্বাচনে ৬৪ বছরের হেমাতিকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের লড়াইয়ে রাইসি ও হেমাতির মধ্যে মূল লড়াই হবে। তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসতে আগ্রহী।

মহসিন রেজাই।
ছবি: রয়টার্স

মহসিন রেজাই

ইরানের শীর্ষ নেতার মনোনয়ন পাওয়া সাংবিধানিক এক্সপেনডিয়েন্সি কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে ১৯৯৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মহসিন রেজাই। ছিলেন ইরানের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান। ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে ১৬ বছর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ৬৬ বছর বয়সী এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও কট্টরপন্থী রাজনীতিক মনে করেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।

আমির হোসেন ঘাজিজাদ্দেহ হাসেমি
ছবি: রয়টার্স

আমির হোসেন ঘাজিজাদ্দেহ হাসেমি


ইরানের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে কম বয়সী প্রার্থী আমির হাসেমি। ৫০ বছর বয়সী রক্ষণশীল ঘরানার এই রাজনীতিক পেশায় চিকিৎসক। নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ। টানা চার মেয়াদে দেশটির আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ইরানের বর্তমান পার্লামেন্টে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন। ক্ষমতায় গেলে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

আগ্রহ কম ভোটারদের

তুলনামূলক কঠোর শাসনব্যবস্থা ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে অর্থনৈতিক শ্লথতার কারণে ইরানের অনেক নাগরিক হতাশায় ভুগছেন। ইরানের ক্ষমতাশালী গার্ডিয়ান কাউন্সিল অনেক প্রভাবশালীর প্রার্থিতা বাতিল করায় এবারের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম দেখা গেছে। এসব কারণে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪১ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেন, যা দেশটির আগের নির্বাচনের তুলনায় বেশ কম। ২০১৭ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আজ দেশটির জনগণের উদ্দেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও জনগণকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এরপরও কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হলে সংবিধান অনুযায়ী দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট গ্রহণ হবে বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পরবর্তী ওই রাউন্ডে অংশ নেবেন প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুজন প্রার্থী। তবে জনমত জরিপ ইব্রাহিম রাইসি ও নাসের হেমাতির পক্ষে রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই দুজন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। তাঁদের মধ্য থেকেই একজন হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।