করোনা হলে যেতে হচ্ছে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে, বিপদে বয়োজ্যেষ্ঠরা

চীনের সাংহাই শহরে চলছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চীনের সাংহাই শহরে চলছে করোনার প্রকোপ। গত মার্চের শুরু থেকে শহরটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তির বয়স ৮০ বছরের বেশি। করোনার ঝাপটা তাঁদের ওপর দিয়েই বেশি যাচ্ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে করোনার বিধিনিষেধের আওতায় কেউ সংক্রমিত হলে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকতে হচ্ছে।

ফলে করোনায় আক্রান্তের হার যখন বাড়তির দিকে থাকে তখন কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোতে রোগীদের ভিড় বেড়ে যায়। কোনো কোনো সময়ে একটি সেন্টারে শত শত মানুষকেও ভর্তি থাকতে দেখা যায়।

এসব কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোর পরিবেশ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রচণ্ড নোংরা শৌচাগার ও উপচে পড়া আবর্জনার ঝুড়িগুলোর ছবি হরহামেশাই চোখে পড়ে।

সাংহাইয়ের এমনই একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ভর্তি আছেন ৯০ বছর বয়সী এক নারী। তাঁর নাতি বিবিসিকে বলেন, কোয়ারেন্টিন সেন্টারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সঙ্গে তাঁর দাদিকে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। এমনকি নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হচ্ছে।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, তাঁর দাদির এক পা অচল। ফলে তিনি ঠিকভাবে হাঁটতে পারেন না। এদিকে কোয়ারেন্টিন সেন্টারের শৌচাগারও তাঁর শয্যা থেকে ১০০ মিটারের বেশি দূরে। শৌচাগারে যাওয়া এড়াতে তিনি কম পানি পান করে থাকার চেষ্টা করছেন।

গত ১৭ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হন বয়োজ্যেষ্ঠ ওই নারী। এরপর থেকেই ভর্তি আছেন কোয়ারেন্টিন সেন্টারে। সেখানে বিশ্রাম নেওয়া একপ্রকার দুরূহ হয়ে পড়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বালানো থাকে। ফলে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না তিনি।
তাঁর নাতি বলেন, দাদি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ঠিকমতো চিকিৎসাও পাচ্ছেন না।

কপালগুণে তাঁকে এক নারী নানা কাজে সহায়তা করছেন। ওই নারী না থাকলে তাঁর দাদির বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।

ওই বয়োজ্যেষ্ঠ নারী বাড়িতে থাকা তাঁর স্বামীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন জানিয়ে তাঁর নাতি বলেন, ‘যখনই আমি তাঁকে (দাদি) ফোন করি, তিনি বারবার বলেন, “আমি বাড়ি যেতে চাই, আমি শিগগিরই বাড়ি যেতে চাই।”’

এদিকে বাসায় তাঁর স্বামীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁকেও কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নেওয়া হবে বলে ভয় পাচ্ছেন নাতি। তাঁর ভাষ্য, দাদাকেও কোয়ারেন্টিনের জন্য নেওয়া হলে তা হবে ‘মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ার মতো’।

ওই নারী জানান, তাঁর দাদা এখন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। ভুগছেন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে। একা শৌচাগারে যেতে পারেন না। বয়োজ্যেষ্ঠরা কোয়ারেন্টিন সেন্টারের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন না। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘সেখানে কীভাবে তিনি (দাদা) বেঁচে থাকবেন?’

তবে এ নিয়ে কিছুটা ভিন্ন মত সাংহাইয়ের আরেক বাসিন্দার। তিনি বলেন, ‘সাধারণ সময়ের মতো করোনার সময়ে প্রবীণ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায় না। কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলো হাসপাতালের মতো অতটা ভালোও না। তবে আমি মনে করি, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সরকার তাদের সেরাটাই করছে।’

সাংহাইয়ে মার্চের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩৭ জনের। চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, আক্রান্তদের প্রায় সবাই আগে থেকে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এবং করোনার টিকা নেননি।

এখন পর্যন্ত চীনে ৩৩০ কোটির বেশি ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা পেয়েছেন দেশটির ৮৮ শতাংশের বেশি মানুষ। তবে অন্যদের তুলনায় ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা নেওয়ার হার বেশ কম। সাংহাইতে ৬২ শতাংশ প্রবীণ ব্যক্তি করোনার টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৩৮ শতাংশ।