যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলার পর থেকে লাপাত্তা চীনা টেনিস তারকা
সম্প্রতি চীনের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ঝ্যাং গাওলির বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলার পর থেকে দেশটির টেনিস তারকা পেং সুয়াই লাপাত্তা। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যমে পেংয়ের লেখা দাবি করে একটি ই-মেইল প্রকাশিত হয়েছে। ই-মেইলটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন উইমেনস টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউটিএ) প্রধান স্টিভ সিমন। তিনি বলেছেন, ই-মেইলটি পেং সুয়াই বা তাঁর পক্ষে কেউ লিখেছিলেন এটা ‘বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে’ তাঁর। খবর বিবিসির।
ডব্লিউটিএ-এর প্রধান স্টিভ সিমনকে পাঠানো ই-মেইলটি গতকাল বুধবার অনলাইনে প্রকাশ করেছে চীনা সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএন। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, ই-মেইলটি পেং সুয়াইয়ের লেখা। তিনি নিখোঁজ কিংবা অনিরাপদ নন। পেং সুয়াই লিখেছেন, ‘আমি বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছি এবং সবকিছু ঠিক আছে।’
তবে ই-মেইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো, সেখানে লেখা আছে, পেং সুয়াই ঝ্যাং গাওলির বিরুদ্ধে যে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন, সেটা মিথ্যা।
ই-মেইলটি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে অনেকে এর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকেই ই-মেইলের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন, সিজিটিএন কর্তৃক প্রকাশিত ই-মেইলের স্ক্রিনশটে একটি টাইপিং কার্সার দৃশ্যমান বলে মনে হচ্ছে।
টেনিস ক্যারিয়ারে দুবার উইমেন ডাবলসে গ্র্যান্ড স্লাম জেতা পেং সুয়াই গত নভেম্বরে এই অভিযোগ তোলেন। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, চীনের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ঝ্যাং গাওলি তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে তাঁকে বাধ্য করেন। পেংয়ের এই উইবো পোস্টের পর চীনে ইন্টারনেটে তোলপাড় শুরু হয়। দেশটির শীর্ষস্থানীয় একজন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে এবারই প্রথম প্রকাশ্যে এ রকম অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ঝ্যাং গাওলির বয়স এখন ৭৫ বছর। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ঝ্যাং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ঘনিষ্ঠ। পেং সুয়াই উইবোতে যে পোস্ট করেছেন, সেটা এখন মুছে ফেলা হয়েছে এবং ওই পোস্ট করার পর থেকে তাঁকে জনসম্মুখে দেখা কিংবা কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি।
এরপর থেকে ডব্লিউটিএ ও টেনিস বিশ্বের নেতৃস্থানীয় মানুষজন পেং সুয়াইয়ের পক্ষে কথা বলে আসছেন। বুধবার ই-মেইলটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডব্লিউটিএ প্রধান স্টিভ সিমন বলেন, তিনি যে ই-মেইল পেয়েছেন, সেটা শুধু পেংয়ের নিরাপত্তা ও অবস্থান সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
এক বিবৃতিতে ডব্লিউটিএ প্রধান বলেন, ‘আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমরা যে ই-মেইল পেয়েছি সেটা প্রকৃতপক্ষে পেং সুয়াই লিখেছেন। তিনি যে নিরাপদ ডব্লিউটিএ ও বাকি বিশ্বকে তাঁর স্বাধীন ও যাচাইযোগ্য প্রমাণ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, পেং সুয়াইয়ের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অবশ্যই সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সেন্সরশিপ ছাড়াই তদন্ত করা উচিত। নারীদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং সম্মান করা দরকার, সেন্সর করা বা নির্দেশ দেওয়া নয়।’
টেনিস ক্যারিয়ারে পেং সুয়াই দুইবার উইমেন ডাবলসে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন। প্রথমবার ২০১৩ সালে উইম্বলডনে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে রোল্যান্ড গ্যারস টুর্নামেন্টে। দুবারই তাঁর গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের সঙ্গী ছিলেন তাইওয়ানের জনপ্রিয় টেনিস তারকা সেই সু-ওয়েই।
চীনে যৌন নিপীড়ন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব #মিটু অভিযোগ উঠেছে, এর মধ্যে অন্যতম এই টেনিস তারকার উইবো পোস্ট। ২০১৮ সালে একজন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ঝৌ শিয়াজুয়ান একটি অনলাইন নিবন্ধে এমন অভিযোগ তোলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল দেশটির আরেক টিভি ব্যক্তিত্ব ঝু জানের বিরুদ্ধে।