ইংল্যান্ড থেকে করোনার বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা বরিসের

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ডে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে করোনা–সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আগামী ১ এপ্রিল থেকে গণহারে বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগও বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বরিস জনসন বলেন, ১ এপ্রিল থেকে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত মানুষদেরই বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। খবর বিবিসির।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ডাউনিং স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জনসন বলেন, কোভিডের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণার দিন এখনো আসেনি। কারণ, করোনাকে এখনো বিদায় জানানো যায়নি।

করোনা মহামারিকে নিজেদের দেশের শান্তিপূর্ণ ইতিহাসে দুটি ‘অন্ধকারতম ও ভয়ংকর’ বছর বলে উল্লেখ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি মনে করেন, অমিক্রনের প্রকোপের সময় পার করে ফেলেছে ব্রিটিশ নাগরিকেরা। এখন আক্রান্তের সংখ্যা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমছে।

বরিস জনসন বলেন, তাঁর দেশ এখন স্বাভাবিকতায় ফেরার অবস্থায় আছে। ‘লিভিং উইথ কোভিড’ বা ‘করোনার সঙ্গে বসবাস’ নামে একটি পরিকল্পনাও উন্মোচন করেছেন তিনি। এ পরিকল্পনা উন্মোচনের সময় তিনি এমপিদের উদ্দেশে বলেন, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে থাকার বিধিনিষেধ বাতিল হয়ে যাবে।

চিকিৎসকদের সংগঠন ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, জনসন সরকারের এ পরিকল্পনাটি করোনায় অতি ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে।

বিরোধী দলগুলোও এ পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার নীল নকশাটি খুব দ্রুত কার্যকর করছেন প্রধানমন্ত্রী। বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তেও উদ্বেগ জানিয়েছে তারা।

ইংল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হুইটি বলেন, করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের বিষয়টি সময় নিয়ে ধীরে ধীরে করতে হয়। হুট করে সবকিছু প্রত্যাহার করে নেওয়া যায় না। এখনো অনেক মানুষ অমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও সতর্ক করেন তিনি। ক্রিস হুইটি মনে করেন, অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন।

স্কটিশ সরকার বলছে, তাদের কাছে সরকারি যে স্বাস্থ্য নির্দেশনা এসেছে, তাতে করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

ইংল্যান্ডে বৃহস্পতিবার থেকে যে নির্দেশনাগুলো কার্যকর হবে

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইনত আর আইসোলেশনে থাকার প্রয়োজন হবে না। তবে তাঁদের কমপক্ষে পাঁচ দিন বাড়িতে অবস্থান ও অন্যদের সংস্পর্শে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য যে প্রক্রিয়া চলছিল, তা আর কার্যকর থাকবে না। ১৮ বছরের কম বয়সীদের সপ্তাহে একবার করোনা পরীক্ষা করানোর যে আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল, তা আর থাকছে না।

করোনায় আক্রান্ত নিম্ন আয়ের মানুষদের আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় ৫০০ পাউন্ড করে ভাতা দেওয়ার যে নিয়ম চালু হয়েছিল, তা–ও আর থাকছে না।

উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন ব্যক্তিদের গণহারে যে বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ ছিল, তা আর দেওয়া হবে না। এখন শুধু অতি ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের করোনা পরীক্ষা করানো হবে।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি বাড়িতে অবস্থান করবেন কি না। তাঁর আইসোলশনে থাকার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভ্যালান্স সতর্ক করেছেন, আগামী কয়েক বছর করোনার বিবর্তন ঘটতে থাকবে। করোনার ভবিষ্যৎ ধরনগুলো যে অমিক্রনের চেয়ে কম গুরুতর হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই।

নতুন নতুন হুমকিগুলো পর্যবেক্ষণ করতে একটি ভাইরাস নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন প্যাট্রিক।