ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবহর থমকে আছে কেন

উপগ্রহ চিত্রে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে রাশিয়ার ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেনাবহর
ছবি: মাক্সার টেকনোলজিসের সৌজন্যে

ইউক্রেনে কাঙ্ক্ষিত সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে চাইলে দেশটির রাজধানী কিয়েভ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া রুশ বাহিনীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে রুশ সেনারা সাঁজোয়া যানের ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বহর নিয়ে কিয়েভের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিন দিন ধরে কিয়েভের উত্তরে এই বহরটি পথে থমকে আছে। পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত রাশিয়ার সেনাবহর ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর কেন শম্বুক গতিতে চলছে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে রাশিয়া এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু জানায়নি।

বেলারুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের চেরনোবিলের নিকটবর্তী একটি শহর প্রিবিরস্ক। রাশিয়ার সেনাবহর প্রিবিরস্ক থেকে আন্তোনভ বিমানবন্দর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় এলাকাটি মেঘলা থাকায় সেনাবহরের সর্বশেষ অবস্থান চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ৩ মার্চ যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দারা দাবি করেন, গত তিন দিনে রুশ সেনাবহরটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। পরদিন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বহরটি কিয়েভ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাবহর থমকে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ যুদ্ধ সরঞ্জামের ঘাটতি। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জ্বালানি, প্রকৌশল ও যুদ্ধের জন্য অন্যান্য রসদ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ইউনিট সংকটে পড়েছে। ওই ইউনিট ইউক্রেন অভিযানে অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের চাহিদা মতো রসদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে কিয়েভের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর কয়েক দিন ধরে রুশ বহরটি পথে থমকে রয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে ওয়ার অন দ্য রকস নামের একটি ওয়েবসাইটে মার্কিন সেনা কর্মকর্তা অ্যালেক্স ভেরশিনিনের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি বলেন, রাশিয়ার আর্টিলারি ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর চেয়েও অনেক বেশি ভারী। এ কারণে হয়তো সরবরাহের সংকট দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার কোনো আর্টিলারি ইউনিট দিনে ৪ হাজার গোলাবর্ষণ করলে প্রতিদিন নতুন করে ওই ইউনিটের ৫০টি ট্রাকের প্রয়োজন পড়ে। রাশিয়া যেখান থেকে এসব সরঞ্জাম পাঠাবে, সেখান থেকে সেনাবহরের বর্তমান অবস্থানের দূরত্ব ৯০ মাইলের বেশি। এতে বিপাকে পড়েছে রুশ সেনাবাহিনী।

আরও পড়ুন

ইউরোপের অন্যতম বড় ইউক্রেনের মতো একটি দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও রসদ সরবরাহ নিয়ে যেকোনো দেশের সেনাবাহিনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে রাশিয়ার জন্য বাড়তি একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া প্রতিরক্ষা কলেজের প্রধানের পদ থেকে অবসরে যাওয়া মেজর জেনারেল মিক রায়ান বলেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে গিয়ে রুশ সেনারা এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। ফলে পথে দাঁড়িয়ে এখন সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

তবে এরপরও ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুত অগ্রগতি করছেন রুশ সেনারা। কৌশলগতভাবে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া রাশিয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২ মার্চ রুশ সেনারা দক্ষিণে ইউক্রেনের প্রধান শহর খেরসন দখলে নেন। পরদিন ৩ মার্চ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ বাহিনী। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

জাপোরিঝঝিয়া থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে নেইপ্রা শহর অবস্থিত। শহরটি এমন এক জায়গায় যেটি একটি প্রধান জংশন ও ডেনিপার নদীর সংযোগস্থল এবং স্থানটি রাশিয়ার সেনাদের ইউক্রেনের আরও ভেতরে অগ্রসর হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন