ইউক্রেন যুদ্ধে ঘটে যাওয়া ১০০ দিন

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা
ছবি: এএফপি

রুশ সেনারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করেছিল। এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের সূচনা হয়। এখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে রুশ সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দনবাসে দখল বাড়াচ্ছে। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের গত ১০০ দিনে ফিরে তাকালে শত শত বেসামরিক লোকের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহরগুলোর দৃশ্যই চোখে ভাসবে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই স্পষ্ট বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের মারিউপোল শহর দখলে নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। লক্ষ্য হিসেবে পুরো দনবাস দখলের কথাও বলেছে মস্কো। দেখে নেওয়া যাক, গত ১০০ দিনের টাইমলাইন:

২৪ ফেব্রুয়ারি : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষায় এবং ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করতে বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে এ আক্রমণ শুরু হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভে থেকেই আক্রমণ প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।

২৬ ফেব্রুয়ারি : রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করে। বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাশিয়াকে বিভিন্ন খেলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে বের করে দেওয়া হয়।

২৭ ফেব্রুয়ারি : পুতিন তাঁর দেশের পারমাণবিক শক্তিকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেন। ইউক্রেন যুদ্ধে যাতে পশ্চিমারা না জড়ায়, তার সতর্কবার্তা হিসেবেই একে দেখা হয়।

২৮ ফেব্রুয়ারি: মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে প্রথম শান্তি আলোচনা শুরু হয়। রাশিয়া ক্রিমিয়ায় তাদের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব দাবি করে। এ ছাড়া ইউক্রেন কখনো পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেবে না, এমন শর্ত দেয়। কিয়েভের পক্ষ থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

মার্চ ৩ : রুশ সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণ উপকূলে হামলা চালিয়ে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে এ অঞ্চলকে যুক্ত করার চেষ্টা চালায়। ৩ মার্চ খেরসন শহরটি দখল করে নেয় রুশ সেনারা। এদিন থেকেই মারিউপোলে গোলা নিক্ষেপ শুরু করে তারা।

মার্চ ১৬ : মারিউপোলের একটি থিয়েটারে বোমা হামলা চালায় রুশ সেনারা। এতে সেখানে আশ্রয় নেওয়া কমপক্ষে ৩০০ ব্যক্তি নিহত হওয়ার দাবি করে কিয়েভ। জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেস ও পশ্চিমা পার্লামেন্টগুলোতে আরও সাহায্যের আবেদন করেন।

এপ্রিল ২-৩: প্রায় এক মাসের যুদ্ধের পর উত্তর ইউক্রেন থেকে সরে এসে দক্ষিণাঞ্চল জয়ের দিকে মনোনিবেশ করার ঘোষণা দেয় মস্কো। এপ্রিল ২ ও ৩ তারিখে বুচা শহরে গণকবর পাওয়ার দাবি করে কিয়েভ। মস্কোর পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

এপ্রিল ৮ : দনবাস থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে ক্রামাতোরস্কের একটি রেলস্টেশন ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেখানে রুশ রকেট হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ৫৭ জন নিহত হন।

এপ্রিল ১৪ : ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী মস্কোভা রণতরিতে আঘাত হানে। এতে কৃষ্ণসাগরে রণতরিটি ডুবে যায়। একে মস্কোর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হয়।

মে ১১: মার্কিন আইনপ্রণেতারা ইউক্রেনে সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সাহায্য হিসেবে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি সহায়তা কর্মসূচিতে সমর্থন দেন।

মে ১৬ : ইউক্রেনের সেনারা দাবি করেন, খারকিভের উপকণ্ঠ থেকে তারা রুশ সেনাদের প্রতিহত করেছেন এবং তাদের রুশ সীমান্তের কাছে ভাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

মে ১৮ : সুইডেন, ফিনল্যান্ড পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানায়।

মে ২১ : মারিউপোল লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটে। রাশিয়া মারিউপোল শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে। সেখানকার আজভস্তাল ইস্পাত কারখানার নিচে লুকিয়ে থাকা ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করে। প্রায় ২ হাজার ৫০০ সেনাকে বন্দী করে নিয়ে যায় রাশিয়া।

মে ২৩ : ইউক্রেনের একটি আদালত ২১ বছর বয়সী এক রুশ সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় দেয়। ৬২ বছর বয়সী একজনকে গুলি করে হত্যায় ওই রুশ সেনার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মে ৩০ : ইইউ নেতারা নিষেধাজ্ঞার ষষ্ঠ ধাপের অংশ হিসেবে বেশির ভাগ রুশ তেল আমদানিতে আংশিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সম্মত হন।

মে ৩১ : ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্কের কিছু এলাকা দখলে নেয় রুশ বাহিনী। এ শহরটি দখলে নেওয়া হলে লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার কাছে চলে যাবে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত দনবাসের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল লুহানস্ক।