ইতিহাস গড়ে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই পদত্যাগ
ইউরোপের দেশ সুইডেনে ইতিহাস গড়েছিলেন ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সুইডেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ও অর্থমন্ত্রী ম্যাগডালেনা। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। মূলত তাঁর সরকারের ওপর থেকে জোট সঙ্গী গ্রিন পার্টির সমর্থন প্রত্যাহার ও পার্লামেন্টে বাজেট অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হওয়ায় নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন ম্যাগডালেনা। খবর আল জাজিরা ও বিবিসির।
পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের ম্যাগডালেনা বলেন, ‘জোট সরকারের ওপর থেকে কোনো দল সমর্থন তুলে নিলে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। এটাই সুইডেনের সাংবিধানিক নিয়ম। এই নিয়ম মেনে আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাচ্ছি। সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ একটি সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারি না আমি।’
তবে শিগগিরই আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইতিহাস গড়া ম্যাগডালেনা। তিনি বলেন, ‘আমি স্পিকারকে বলেছি, পদত্যাগ করছি। তবে একক দলের নেতা হিসেবে সরকারপ্রধানের পদে দ্রুত ফিরে আসবো।’
গত ১০ নভেম্বর সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেন পদত্যাগ করেন। ২০১৪ সাল থেকে গ্রিন পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে সংখ্যালঘু জোটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি। চলতি বছরের শুরুর দিকে স্টেফান বলেছিলেন, দলের পরবর্তী নেতৃত্বকে যথেষ্ট সময় দিতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করবেন তিনি।
স্টেফানের পদত্যাগের পর ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের নেতা নির্বাচিত হন ৫৪ বছর বয়সী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন। তিনি আগের সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। গত মঙ্গলবার বামপন্থীদের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয় তাঁর। পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধির শর্তে অ্যান্ডারসনকে সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দেয় লেফট পার্টি।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোটের অংশীদার গ্রিন আর সেন্টার পার্টির সমর্থনও আগেই নিশ্চিত করেন ম্যাগডালেনা। তবে পার্লামেন্টে গতকালের ভোটের আগে বড় ধাক্কা খেতে হয় তাঁকে। এই দুই দলের এমপিরা ম্যাগডালেনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা না দিলেও লেফট পার্টির প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দেন।
প্রাধানমন্ত্রী হতে ভোটাভুটিতে পার্লামেন্টের ১১৭ জন সদস্য ম্যাগডালেনার পক্ষে ভোট দেন। ৫৭ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। ১৭৪ জন তাঁর বিপক্ষে ভোট দেন। ভোটদানে অনুপস্থিত থাকেন একজন। সুইডেনের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন হয় না। প্রার্থীর বিরোধিতাকারীরা ১৭৫ জনের বেশি না হলেই চলে।
তবে ম্যাগডালেনার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুইডেনের পার্লামেন্টে শুরু হয় চরম নাটকীয়তা। ম্যাগডালেনার উত্থাপন করা বাজেট অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানান গ্রিন পার্টির সদস্যরা। বিরোধের এক পর্যায়ে তাঁরা সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেন। এর জের ধরে সুইডেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হয় ম্যাগডালেনাকে।