টিকার বুস্টার ডোজ কতটা প্রয়োজন?
করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার সঙ্গে বাড়ছে টিকার চাহিদা। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই তাদের বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় এনেছে। আবার অনেক দেশই টিকাদানে বহু পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যেই আলোচনা চলছে টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিয়ে। বুস্টার ডোজ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার বুস্টার ডোজ কতটা প্রয়োজন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় টিকার সংকট মিটিয়ে তারপর তৃতীয় ডোজের বিষয়টি ভাবা উচিত। এসব বিতর্কের মধ্যেই অনেক দেশ বুস্টার ডোজ দিতে শুরু করেছে বা শুরু করার কথা ভাবছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুর দিকে করোনার টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার–বায়োএনটেক টিকার বুস্টার ডোজের বিষয়টি সামনে আনে। বাড়তি ডোজের ফলে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সুরক্ষা আরও শক্তিশালী হবে বলে দাবি করে তারা। টিকা উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানের মতে, টিকার দুই ডোজ নিলে শরীরে কমপক্ষে ছয় মাস অ্যান্টিবডি থাকে। মার্কিন ও ইউরোপের কর্তৃপক্ষের কাছে তারা তৃতীয় ডোজের অনুমোদন চাইবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, ফাইজার–বায়োএনটেকের তৃতীয় ডোজের জন্য আবেদন বুস্টার ডোজের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। তবে এর অর্থ এটা না যে সবাই বাড়তি ডোজ পাবে বা সবার এটার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, এখনো অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা দুটি ডোজ পাননি।
টিকার তৃতীয় ডোজ আদতেই প্রয়োজন আছে কি না, তা শিগগিরই বলা যাবে না বলে উল্লেখ করেছে ইউরোপিয়ার মেডিসিনস এজেন্সি এবং ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল। যৌথ এক বিবৃতিতে তারা জানায়, করোনার দুই ডোজ টিকা কত দিন পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়, তা জানতে যথেষ্ট তথ্য চলমান টিকা কার্যক্রম এবং নানা পরীক্ষা–নিরিক্ষা থেকে এখনো পাওয়া যায়নি। একই মত দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি কমিটির পরিচালক দিদিয়ের হউসিন।
এদিকে শুক্রবার হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ওবান বলেন, দেশটিতে আগামী মাস থেকে টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে। ইউরোপের এই দেশের বাসিন্দাদের চীন ও রাশিয়ার টিকা দেওয়া হচ্ছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শুধু মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ টিকার তৃতীয় ডোজ দিতে শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহে বুস্টার ডোজ দিতে শুরু করেছে ফ্রান্স ও ইসরায়েল। সাধারণত যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং যাঁরা ক্যানসার বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এমন ব্যক্তিদের টিকার দুই ডোজ দেওয়া পরও শরীরে কম অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। ফলে তৃতীয় ডোজের প্রয়োজন পড়ে।
চলতি বছরের শুরুতেই টিকা নেওয়া শেষ করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সেপ্টেম্বর থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে বলে সোমবার জানিয়েছে ফ্রান্স। চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির ভ্যাকসিন কাউন্সিল জানায়, ৮০ বছরের বেশি বয়সের লোকজনদের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হবে। মহামারির ধরন বুঝে সম্ভাব্য তরুণদেরও তৃতীয় ডোজ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ভ্যাকসিন কাউন্সিল।