দনবাসে ২০ হাজার ভাড়াটে যোদ্ধা পাঠিয়েছে রাশিয়া
ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে নতুন করে শুরু করা অভিযানে ২০ হাজার ভাড়াটে যোদ্ধা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। সিরিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁদের সেখানে জড়ো করা হয়েছে। কোনো ধরনের ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সাঁজোয়া ছাড়াই তাঁদের যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। ইউরোপীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান এসব কথা জানিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, পূর্ব ইউক্রেনে মোতায়েন করা ভাড়াটে যোদ্ধার সংখ্যা ১০ থেকে ২০ হাজার হতে পারে। তাঁদের মধ্যে কত জন সিরিয়া, লিবিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে এসেছেন, তা আলাদা করে বলা কঠিন। রাশিয়ার মার্চেনারি কোম্পানি ‘ওয়াগনার গ্রুপ’ তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিরিয়া ও লিবিয়া অঞ্চল থেকে পূর্ব দনবাসে তাঁদের স্থানান্তর করা হয়। ইউক্রেনের প্রতিরোধের বিরুদ্ধে তাঁদের গণহারে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা মূলত পদাতিক। তাঁদের তেমন কোনো সরঞ্জাম ও সাঁজোয়া যান নেই।
ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে পদমর্যাদা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় সিরিয়ার সাবেক সেনাদের মাসে ৬০০ থেকে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওয়াগনার লিবিয়ায় যুদ্ধরত অধিকাংশ সেনাকে ইউক্রেনে নিয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে। লিবিয়ার যোদ্ধাদের ইউক্রেনে পাঠাতে মস্কো–সমর্থিত লিবিয়ার যুদ্ধবাজ খলিফা হাফতারের সঙ্গে রাশিয়া একটি চুক্তি করেছে। গত মাসে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ এমন দাবি করেছে।
পূর্ব ইউক্রেনের যত দূর সম্ভব দখলে নিতে রাশিয়ার প্রচেষ্টা সফল করতে এসব ভাড়াটে যোদ্ধা ব্যবহার করা হচ্ছে। পশ্চিমা প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিজয় ঘোষণার মতো কিছু অর্জনের জন্য ক্রেমলিন তাড়াহুড়ো করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মরণে ৯ মে মস্কোর সামরিক কুচকাওয়াজে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেটা ঘোষণা দিতে চান।
ইউরোপীয় এই কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় ধাপে রাশিয়ার লক্ষ্য চারটি। দনবাস দখল, ক্রিমিয়ার সঙ্গে স্থল সংযোগ স্থাপন, যার জন্য অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর গুরুত্বপূর্ণ, ক্রিমিয়ায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে খেরসন প্রশাসনিক অঞ্চল দখল এবং অতিরিক্ত ভূখণ্ড দখল, যা ‘বাফার জোন’ কিংবা দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে হামলায় অংশ নেওয়া সশস্ত্র বাহিনীর এখনো তিন-চতুর্থাংশ রাশিয়ার অবশিষ্ট আছে। ৭৬ ব্যাটালিয়ন ট্যাকটিক্যাল গ্রুপ, সব মিলিয়ে ৬০ হাজার সেনা। কিয়েভ এবং উত্তরের যুদ্ধে পরাজয়ে যেসব সীমাবদ্ধতা রুশ বাহিনীর ছিল, এখনো একই ধরনের সীমাবদ্ধতা তারা মোকাবিলা করছে বলে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন।
দনবাসে সরবরাহ লাইন তুলনামূলক কম দূরত্বের হলেও রসদ জটিলতা রয়েছে। অধিকাংশই নির্ভর করবে সড়ক ও রেলপথের পরিস্থিতির ওপর। ইউরোপীয় এই কর্মকর্তা বলেন, রেলপথের ওপর রুশ বাহিনী অনেক বেশি নির্ভরশীল। রেল যোগাযোগব্যবস্থায় বহুবার হামলা চালিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। তিনি আরও বলেন, রুশ সেনা কর্মকর্তাদের মনোবল কম, সেটা আরও কমছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি শুরুতে পশ্চিম ছাড়া বাকি তিন দিক থেকে স্থল অভিযানও চালানো হয়। ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিরোধের মুখে পরে উত্তর দিক থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে হামলা জোরদার করে রুশ বাহিনী।