ধনী দেশগুলোতে দ্রুত বাড়ছে কার্বন নিঃসরণ
জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশদূষণ রোধে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই বিশ্বের ধনী দেশগুলো থেকে এটির নিঃসরণের হার দ্রুতগতিতে বাড়তে দেখা গেছে। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ২০টি ধনী দেশে কার্বন নিঃসরণের হার জোরেশোরে বাড়ছে। বিবিসির খবর।
‘দ্য ক্লাইমেট ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’ নামের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে বলে বিবিসির খবরে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ধনী ও উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সদস্যদের মধ্যে এ বছর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন ৪ শতাংশ বাড়বে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে এই হার ৬ শতাংশ কমেছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন, ভারত ও আর্জেন্টিনাও তাদের ২০১৯ সালের নির্গমন মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে। গবেষকেরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির অব্যাহত ব্যবহার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে হ্রাস করছে।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬-এর দুই সপ্তাহ বাকি। সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য হলো, তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টিকে নাগালের মধ্যে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রাক্-শিল্পযুগের তুলনায় বর্তমানে বিশ্ব ১.১ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ। ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা বৃদ্ধিকে সীমাবদ্ধ রাখাটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তথ্য উঠে আসেনি।
১৬টি গবেষণা সংস্থা ও পরিবেশগত গোষ্ঠীর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জি-২০ দেশগুলোতে কয়লার ব্যবহার এ বছর ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী থাকবে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও কয়লার ব্যবহার বাড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জোরেশোরে এগোতে থাকায় চীনে জ্বালানি চাহিদা বেড়েছে। তাই সেখানে কয়লার ব্যবহারও বাড়তে দেখা গেছে। সঙ্গে বেড়েছে দামও। গত বছরের তুলনায় কয়লার দাম ২০০ শতাংশ বেড়েছে।
ক্লাইমেট ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জি-২০ দেশগুলোতে গ্যাসের ব্যবহার ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজনৈতিক নেতারা কোভিডের ধাক্কা থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সবুজের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ধনী দেশগুলো বাস্তবে সে পথে হাঁটেনি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে ১.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ৩০০ বিলিয়ন ডলার সবুজ প্রকল্পের জন্য রাখা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ধনী দেশগুলোতে সৌর এবং বায়ুশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টিও উঠে এসেছে। গত বছর জি-২০ দেশগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। ২০২০ সালে যেখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ছিল ১০ শতাংশ, তা এ বছর ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিকভাবেও জি-২০ গ্রুপগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। জি-২০-এর অধিকাংশ দেশ এ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গ্লাসগো সম্মেলনের আগেই এ জোটের সব সদস্য ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন কার্বন পরিকল্পনা গ্রহণে সম্মত হয়েছেন। তবে চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরব এ নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
ব্রিটেনের রানির ক্ষোভ
রয়টার্স জানায়, ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ বলেছেন, যেসব বিশ্বনেতা জলবায়ু নিয়ে বাগাড়ম্বর করেন কিন্তু সংকট মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নেন না, তাঁদের ওপর তিনি বিরক্ত। রানি বলেন, তিনি গ্লাসগো সম্মেলনে অংশ নেবেন। কিন্তু সম্মেলনে কারা আসবেন, সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি।
রানি বলেন, ‘যাঁরা আসছেন না, আমরা কেবল তাঁদের বিষয়ে জানি। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তাঁরা এ নিয়ে পদক্ষেপ নেন না। এটা সত্যিই বিরক্তিকর।’