ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা

বিস্ফোরণে চারটি ভবন ধসে পড়ে
ছবি: এএফপি

ইতালির সিসিলি দ্বীপে বড় ধরনের বিস্ফোরণে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীও রয়েছেন। তিনি একজন নার্স।

সম্ভবত গ্যাস লিক হয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চারটি আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। গত শনিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাভানুসাতে এ ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘মনে হয়েছে যেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।’

কোরিয়ারে সেরা ডেলার পত্রিকার খবরে বলা হয়, অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর বয়স ৩০ বছর। তাঁর নাম সেলেনি প্যাসারিয়েলো। তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আগামী সপ্তাহে তাঁর প্রসবের তারিখ ছিল।
প্যাসারিয়েলোর লাশ তাঁর স্বামী জিউসেপ কারমিনা ও শ্বশুর-শাশুড়ির পাশে পাওয়া গেছে। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে ভবনের তৃতীয় তলায় গিয়েছিলেন ওই প্যাসারিয়েলো।

এখনো ভবনগুলোর দুই বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সন্ধানে অবিরাম তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার ফাইটাররা।

ধসে চারটি ভবনের মধ্যে চারতলা একটি ভবনও রয়েছে। ইতালির সিভিল প্রটেকশন এজেন্সির তথ্যমতে, শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দার বসবাস।

রোববার সকালে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই নারীকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপে জীবিত মানুষের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে না পেলেও স্নিফার কুকুর তাদের খোঁজ পায়।

এ ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ক্যালোগেরো বোনান্নো বলেন, প্রতিবেশীরা এখানে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার কথা বলেছিল।

এখনো ভবনগুলোর দুই বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সন্ধানে অবিরাম তল্লাশি চলছে
ছবি: এএফপি

স্থানীয় গণমাধ্যমকে বোনান্নো বলেন, ‘আমি ভয়ংকর গর্জন শুনেছি। মনে হচ্ছিল, বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে অথবা কোনো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিস্ফোরণে জানালার ফ্রেম ফেটে যায়। আমরা তাৎক্ষণিক নিচে রাস্তায় নেমে যাই। চারদিকে আগুন আর ধ্বংসস্তূপ।’ ঘটনাস্থল থেকে তিন সন্তান, স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে পালান তিনি।

এদিকে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবেশক ইতালগ্যাস এক বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা গ্যাস লিক হওয়ার অভিযোগ পায়নি। ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো অবকাঠামোগত কাজও চলছে না, যে পাইপলাইন ফেটে গিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ছাড়া গত বছর ও চলতি বছর শহরের গ্যাস বিতরণ লাইন পুরোপুরি যাচাই করে দেখা হয়েছে।

শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দার বসবাস ছিল।
ছবি: এএফপি

দ্য রিপাবলিকা নামের দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরের গ্যাস পাইপলাইনগুলো ৩৬ বছর আগে বসানো। পাইপগুলো যেখান দিয়ে গেছে, সেখানে অনেক স্থানের মাটি সরে গেছে, কোথাও মাটি নরম হয়ে পড়েছে।

সিসিলি হচ্ছে ইতালির সবচেয়ে গরিব অঞ্চল। এখানকার জীবনমান নিম্ন ও অবকাঠামোগুলো জরাজীর্ণ। অতীতের দশকগুলোতে এখানকার তৈরি বাড়িঘর ও অন্যান্য অবকাঠামোর অনেকগুলো দুর্বল ও সস্তা উপকরণ দিয়ে তৈরি, এর ফলে ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে বেশি।